Last updated on September 15th, 2023 at 11:00 pm
Vishwakarma Puja Mantra in Bengali : শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মা-পুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই।
মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতা। সকল দেবতার প্রাসাদ, সকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা। বিবরণ অনুযায়ী তাঁর চার বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত।
Biswakarma Pranam Mantra in Bengali
বিশ্বকর্মা পূজার ধ্যানমন্ত্র:
দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ।
বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক।।
ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।
এর অর্থ হল, হে দংশপাল ( বর্মের দ্বারা পালনকারী ) , হে মহাবীর , হে বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্ব বিধাতা, হে সুন্দর চিত্র রূপ কর্মকারক , আপনি মাল্য চন্দন ধারন করে থাকেন ।
বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্রঃ
দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক ।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদয়ক ।।
অর্থ- দেবশিল্পী , মহাভাগ ( দয়াদি অষ্ট গুন যুক্ত ) দেবতা দের কারু কার্য্যসাধক সর্বাভীষ্ট প্রদানকারী হে বিশ্বকর্মা আপনাকে নমস্কার ।
বিশ্বকর্মা পূজার কীর্তি ও স্থাপত্য:
বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা। তিনি বিশ্বভুবন নির্মাণ করেছেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকেয়র শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়।
কারখানায় এই পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে স্বর্ণকার, কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিরাও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন।
Biswakarma Puja Anjali Mantra in Bengali
বেদে বিশ্বকর্মা
ঋক বেদের দশম মণ্ডলের দুটি বিশিষ্ট সূক্তে বিশ্বকর্মাকে স্তব করা হয়েছে । দুল্যক ও ভূলোক প্রথমে জলাকার ও সম্মিলিত ছিল। উভয়ের সীমা যত বৃদ্ধি পেলো- ততই তারা পরস্পর দূরবর্তী হতে লাগলো। এবং এক সময় পৃথক হল। বিশ্বকর্মা মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করে নিরীক্ষণ করলেন।
এই বিশ্ব তাঁরই কর্ম বলে তাঁর নাম বিশ্বকর্মা । বিশ্বকর্মা ‘বিমনা’ অর্থাৎ তিনি সমষ্টি মনা। বিশ্বকর্মা ‘ধাতা’ অর্থাৎ তিনি স্রষ্টা, বিশ্বকর্মা শ্রেষ্ঠ, বিশ্বকর্মা সর্ব দ্রষ্টা , এবং তিনি ‘ধামানি বেদ ভুবনানি বিশ্বা’ বিশ্ব ভুবনের সকল ক্ষেত্রই তাঁর পরিজ্ঞাত এবং তিনি সর্ব অন্তর্যামী।
বিশ্বকর্মার চোখ, বদন, বাহু , পদ সর্বত্র, সর্ব দিকে । তিনি বিশ্বতশ্চক্ষু, বিশ্বতোমুখ , বিশ্বতস্পাৎ । এই বিশ্ব যজ্ঞে তিনি নিজেকে আহুতি দিয়েছেন । অর্থাৎ বিশ্ব জগতের কল্যাণে তিনি সর্বদা চিন্তা রত। তিনি বাচস্পতি অর্থাৎ বাক্যের অধীশ্বর। তিনি মনোজেব অর্থাৎ মনের ন্যায় বেগ মান । তিনি বিশ্বের সমস্ত প্রানীর মঙ্গলকারী । তিনি সাধুকর্মা অর্থাৎ তাঁর চেষ্টা ও বিধান মঙ্গলময়।
আরও পড়ুন:
➡️ Happy Vishwakarma Puja Quotes in Bengali
বিশ্বকর্মা পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
এষ সচন্দন দুর্বাপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ
ওঁ শিল্পবতে শ্রীবিশ্বকর্মণে নমঃ
সরলার্থ–চন্দন ,দুর্বা,পুষ্প ও বিল্বপত্র দিয়ে শিল্প দেবতা বিশ্বকর্মাকে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করছি এবং প্রণাম জানাচ্ছি!
প্রণামমন্ত্র—
ওঁ দেবশিল্পিন মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্ট ফলপ্রদঃ
সরলার্থ—হে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা আপনি মহান দেবগণের কার্যসম্পাদক সর্বঅভীষ্ট পূরনকারী ৷তোমাকে প্রণাম৷
বিশ্বকর্মার কৃপায় শিল্প ও বিজ্ঞানের পারদর্শিতা লাভ করা যায়৷ তার আশীর্বাদে কারু শিল্প কর্মের দক্ষতা অর্জন করা যায় ৷পারিবারিক ও মন্দির ভিত্তিক এ পূজা করার মাধ্যমে বিশ্বকর্মা দেবের প্রতি পূজারীদের ভক্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ৷বিশ্বকর্মা পূজার মধ্য দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটানোর প্রেরণা পাওয়া যায় এবং সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে৷ পূজারী কোন কাজে মনোযোগী হয় এবং কার্য সম্পাদনের মনোভাব গড়ে ওঠে ৷বিশ্বকর্মার কৃপায় পূজারী গণ শিল্পকলা ও যান্ত্রিক বিদ্যায় পারদর্শী ত লাভ করতে পারে ৷বিশ্বকর্মা পূজার মধ্য দিয়ে লোক শিল্পের বিকাশ ঘটে৷
পুরান শাস্ত্রে বিশ্বকর্মা
বেদের যিনি বিশ্ব স্রষ্টা , পুরানে তিনি দেবতা দের শিল্পী বিশ্বকর্মা । তিনি স্বর্গের একজন দেবতা । তিনি সহস্র রকম শিল্প জানেন । তিনি দেবতা দের শিল্পের কারিগর । কারিগরি সকল বিদ্যা বিশ্বকর্মার হাতে । কোন কোন পুরান বলে বিশ্বকর্মার পিতা হলেন প্রভাস । প্রভাস হলেন অষ্টবসুর এক জন । আর বিশ্বকর্মার মাতা হলেন বরবর্ণিনী । বরবর্ণিনী হলেন দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী । আবার ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরান বলে ব্রহ্মার নাভি থেকে বিশ্বকর্মার সৃষ্টি ।
পুরানের বিশ্বকর্মা একজন শিল্পী। তিনি বিমান নির্মাতা ( দিব্য দেব বিমান ), অলংকার ভূষন , আয়ূধ প্রস্তুতকারক । মনুষ্য শিল্পীরা বিশ্বকর্মার প্রবর্তিত শিল্প কেই উপজীব্য করে বেঁচে আছে । বিশ্বকর্মা প্রচুর জিনিষ নির্মাণ করেছেন। কুঞ্জর পর্বতে অবস্থিত অগস্ত্য মুনির ভবন, কুবেরের অলকা পুরী ও দিব্য বিমান, রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরী – সকল কিছু বিশ্বকর্মার দ্বারা সৃষ্টি।
রাবনের রাজাপ্রসাদের সাথে সুন্দর উদ্যান, গোষ্ঠ, মন্ত্রণা গৃহ, মনোরম ক্রীড়া স্থান, রাজাপ্রাসাদের কারুকার্য ইত্যাদি দেবশিল্পীর নিখুত শিল্প কলার পরিচয় দেয় । এছাড়া ভাগবত পুরান অনুসারে দ্বারকা নগরীর যে সুরক্ষিত, ভাস্কর্য , কলা কৌশলের একটি ধারনা পাওয়া যায়- তাতে শিল্পী বিশ্বকর্মার শিল্প কে দেখে আশ্চর্য হতে হয় ।
বিশ্বকর্মার অপর নির্মাণ হল দেবপুরী । তিনি সমস্ত সৌন্দর্য কে মিলিয়ে এই পুরী নির্মাণ করেছিলেন । এই পুরীকে পাওয়ার জন্য বারংবার অসুর গণ সুর লোকে হানা দিয়েছিলেন। তাই বিশ্বকর্মার সৃষ্টিকে প্রনাম না করে থাকা যায় না । মৎস্য পুরান বলে- কি কূপ, কি প্রতিমা, কি গৃহ, কি উদ্যান সকল কিছুর উদ্ভাবক হলেন বিশ্বকর্মা।
শুধু এখানেই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি শেষ নয়, যে বিমানে চড়ে দেবতারা গমন করেন- তাও বিশ্বকর্মার তৈরী। এবং বিভিন্ন দিব্য বান- যা কেবল দেবতাদের অস্ত্রাগারে থাকে – তাও বিশ্বকর্মার তৈরী। যে ধনুক দিয়ে ভগবান শিব ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছিলেন, যে ধনুক পরশুরামের কাঁধে শোভা পেতো- সেই ধনুক বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। বৃত্রাসুর বধের জন্য বিশ্বকর্মা দধীচি মুনির অস্থি থেকে বজ্র নির্মাণ করে দেবেন্দ্র কে দিয়েছিলেন।
কিছু পুরান বলে ভগবান বিষ্ণুর চক্র, ভগবান শিবের ত্রিশূল বিশ্বকর্মার সৃষ্টি । শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেখি মহিষাসুর বধের জন্য দেবী মহামায়া প্রকট হলে দেবীকে তীক্ষ্ণ বর্শা, অভেদ্য কবচ এবং বহু মারনাস্ত্র বিশ্বকর্মা দেবীকে প্রদান করেন । রামচন্দ্রের সেতু বন্ধনের অন্যতম কারিগর নল এই বিশ্বকর্মার পুত্র । বিষ্ণু পুরান বলে ত্বষ্টা নামক এক শিল্পী ছিল- যিনি বিশ্বকর্মার পুত্র।
দেবতাদের শিল্পী যেমন বিশ্বকর্মা , তেমনি অসুর দের শিল্পী হলেন ময় দানব। বায়ু পুরান ও পদ্ম পুরান মতে ভক্ত প্রহ্লাদের কন্যা বিরোচনার সাথে বিশ্বকর্মার বিবাহ হয়। বিশ্বকর্মার ঔরসে বিরোচোনার গর্ভে অসুর শিল্পী ময় দানবের জন্ম হয় ।