বিশ্বকর্মা পূজার ছুটি নিয়ে কিছু কথা আজকের নিবন্ধে তুলেধরলাম। ১৭ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজো থাকলেও বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজা পড়ছে। আর এই কারণে সংশয় দেখা দিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি অফিস ও স্কুল, কলেজ ও নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষ্যে কোন দিন ছুটি থাকবে? কারন রবিবার দিন ছুটির লিস্টে থাকলেও পুজো কিন্তু পরেছে সোমবার। তাই সোমবার সেই ছুটি দেওয়া হবে কিনা, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে সকল সরকারী অফিসের কর্মচারীরা।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তথা অর্থ দপ্তর থেকে বাংলার প্রতিটি উৎসব, অনুষ্ঠানে, জন্ম জয়ন্তীতে ছুটি ঘোষনা করা হয়ে থাকে। তাই সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো তাকিয়ে থাকে কোনো পূজা, পার্বণ এলে সেই দিনটি উপলক্ষে আদোও কোনো ছুটি থাকবে কিনা!
বিশ্বকর্মা পূজার ছুটি নিয়ে কিছু কথা
বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের কর্মকার অর্থাৎ বিশ্বের নির্মাণকর্তা। সেই কারণেই তাকে বিশ্বকর্মা (Lord Vishwakarma) বলা হয়। তাছাড়া অনেকের কাছে বিশ্বকর্মা স্বর্গের কারিগর হিসেবেও পরিচিত। শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা হলেন বিশ্বকর্মা। কথিত আছে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা। এইদিন কলকারখানায় যন্ত্রের পূজা করা হয়।
মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পকলার দেবতা। সকল দেবতার প্রাসাদ তৈরি করা থেকে সকল প্রকার অলংকারের নির্মাতাও তিনিই ছিলেন। বিশ্বকর্মার চারটি বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা হলেন দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেব শিল্পী নামেও পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তার মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তার পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হল হাতি।
বিশ্বকর্মা পূজার ছুটি সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে বন্ধ থাকবে
সোমবার ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। আর পুজোর ঠিক চারদিন আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই বছরেও তার অন্যথা হলো না।
বৃহস্পতিবার অর্থ দফতর থেকে জারি করা হয়েছে একটি বিজ্ঞপ্তি। সেখানেই এই ছুটির কথা ঘোষণা করা হয়েছে ।এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শহর এবং গ্রামীণ সব সরকারি কার্যালয়েই অর্ধদিবস ছুটি থাকবে। ছুটির আওতায় থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা অন্যান্য অফিসও। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দুপুর দু’টোর পর বন্ধ হয়ে যাবে সব সরকারি কার্যালয়।
- আরও পড়ুন:
- 👉 বিশ্বকর্মা পূজার পাঁচালী
- 👉 Viswakarma Puja Wishes, Quotes in Bengali
- 👉 বিশ্বকর্মা প্রনাম মন্ত্র, পূজা মন্ত্র ও পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
- 👉 শুভ বিশ্বকর্মা পূজা শুভেচ্ছা বার্তা, স্ট্যাটাস ও ছবি
এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, শহর এবং গ্রামীণ সব সরকারি কার্যালয়েই অর্ধদিবস ছুটি থাকবে। ছুটির আওতায় থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা অন্যান্য অফিসও। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দুপুর দু’টোর পর বন্ধ হয়ে যাবে সব সরকারি কার্যালয়।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোয় হাফ ছুটি। বৃহস্পতিবার এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে নবান্নে তরফে। ইতিমধ্যে অর্থ দফতরের তরফে ছুটি সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেই এই ছুটির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, শহর এবং গ্রামীণ সব সরকারি কার্যালয়েই অর্ধদিবস ছুটি থাকবে। ছুটির আওতায় থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা অন্যান্য অফিসও। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দুপুর দু’টোর পর বন্ধ হয়ে যাবে সব সরকারি কার্যালয়।
সমস্ত রাজ্য সরকারি অফিস, শহরের এবং গ্রামের সরকারি সংস্থা, কর্পোরেশন, সরকার অধীনস্ত সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য সমস্ত প্রতিষ্ঠান সোমবার দুপুর 2টোয় ছুটি হয়ে যাবে, এমনই বলা হয়েছে ওই নির্দেশে।
বিশ্বকর্মা পুজোর তাৎপর্য
বৈদিক দেব বিশ্বকর্মা হলেন দেবশিল্পী। স্থাপত্য, শিল্প, সৃষ্টি এবং বিভিন্ন নির্মাণই হল তাঁর কর্ম। কারিগরী শিল্প বিশ্বকর্মার হাত ধরেই এসেছে বলে বিশ্বাস। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, প্রাচীনকালের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রাসাদগুলি ভগবান বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছিলেন। কথিত আছে, ভগবান ব্রহ্মা বিশ্বজগতের সৃষ্টির দায়িত্ব তাঁর হাতে অর্পণ করেছিলেন। তিনি পরম সত্যের প্রতিরূপ এবং সৃষ্টিশক্তির দেবতা। তিনি ‘দেবশিল্পী’ নামে পরিচিত। বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরীর নির্মাতা, তিনি বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। দেবতাদের অস্ত্রও তাঁরই হাতে তৈরি। পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেছেন, এমনটাই বিশ্বাস।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে বিভিন্ন কলকারখানা, শিল্প, অফিস, দোকান, বাড়িতে যাদের গাড়ি বা মেশিন আছে এবং অন্যান্য নির্মাণ স্থানেও বিশ্বকর্মার পূজা সর্বাধিক প্রচলিত। এই দিনে সমস্ত রকম যন্ত্রপাতির বিশেষ পূজা করার রীতি রয়েছে। শিল্পী, কারিগর, তাঁতি এবং ব্যবসায়ীরা কন্যা সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মা পুজো করে থাকেন। স্বর্ণকার, কর্মকার, দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিরাও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকে। কাজের ক্ষেত্রে শ্রীবৃদ্ধির জন্য বিশ্বকর্মার পুজো করা হয়। তাঁর পূজা করার মাধ্যমে ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভ হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে বৃদ্ধি হয়।