শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পূজার মন্ত্র , ব্রত কথা ও পূজা পদ্ধতি : কৃষ্ণের জন্মদিনটি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী বা জন্মাষ্টমী নামে পালিত হয়। কৃষ্ণ যাদব-রাজধানী মথুরার রাজপরিবারের সন্তান। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র।
তাঁর পিতামাতা উভয়ের যাদববংশীয়। দেবকীর দাদা কংস তাঁদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তাঁর মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাঁদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তাঁর সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে, বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন।
ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হয়ে শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নিয়েছিলেন মাতা দেবকীর গর্ভে। তাই, হিন্দু-ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এইদিন গোপাল পুজোর আয়োজন করা হয়।
জন্মাষ্টমী ব্রত কথা
মহা সমারোহে কংসরাজের দরবারে ধনুর্যজ্ঞাদি ও মহামল্লযুদ্ধ অনুষ্ঠান ছলে ষড়যন্ত্রকারী কংস কৃষ্ণকে হত্যা করবার জন্যই অক্রূরকে দিয়ে বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণ ও বলরামকে নিয়ে এসেছিল। দুরাচারী কংসকে বধ করা এবং মা দেবকী ও পিতা বসুদেবকে কারামুক্ত করা এবং বন্দী উগ্রসেনকে মথুরার রাজসিংহাসনে পুণরায় বসাবার জন্য কৃষ্ণ মথুরাতে আসেন।
মথুরাবাসী ভক্তগণ বিশেষরূপে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন কবে দৈববাণী নির্ধারিত সেই ব্যক্তিটির আগমন হবে যে কংসকে উচ্ছেদ করবে, তাকেই আমরা এ জীবনে দর্শন পেতে চাই। সত্যি সেই দিন এসে গেল। কৃষ্ণ ও বলরাম মথুরা নগরীতে প্রবেশ করলেন। সবাই সেই সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ-বলরামকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে লাগল। মথুরাপুরে দুরাচারী কংসের বিনাশ হলে দেবকী বসুদেব অন্ধক প্রভৃতি অসংখ্য স্নেহপরায়ণ আত্মীয়স্বজন কৃষ্ণের স্তুতি করতে লাগলেন। মাতৃস্থানীয়া রমণীয়া কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করতে নিজ কোলে নিয়ে ক্রন্দন করতে শুরু করলেন।
বসুদেবও আনন্দে কাঁদতে লাগলেন। পুত্র পুত্র বলে কৃষ্ণকে আলিঙ্গন করতে লাগলেন। তারপর বলরাম ও কৃষ্ণকে বসুদেব বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলতে লাগলেন, হে বৎস, তোমরা আমার পুত্র। তোমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আজ আমার জন্ম সার্থক হলো। আমার জীবন ধন্য হলো।
বসুদেব-দেবকীর স্নেহ-ক্রন্দন ও আনন্দ দর্শন করে মথুরাবাসী আনন্দিত হয়ে কৃষ্ণকে প্রণতি জানিয়ে বললেন, হে কৃষ্ণ, আজ আমাদের আনন্দের সীমা নেই। আজ মল্লযুদ্ধে দুরাত্মা কংসের নিপাত হয়েছে। হে কৃষ্ণ! এখন আমাদের সবার প্রতি প্রীত হউন। আমাদের এ জনসাধারণের মধ্যে আপনার কাছে একটি প্রস্তাব নিবেদন করি, তা হলো, দেবকী দেবী যে দিন আপনাকে প্রসব করেছেন, সেই দিনটি সম্বন্ধে আমরা কিছুই নির্ধারণ করতে পারি না।
সেই দিন আপনার জন্ম-উৎসব আমরা সম্পাদন করব। আপনি আমাদের অনুমতি প্রদান করুন। হে কৃষ্ণ! আমরা ভক্তি সহকারে আপনার শরণ গ্রহণ করলাম, আমাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করুন। সেই কথা শুনে বসুদেব বলরাম ও কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে- আনন্দে রোমাঞ্চিত হলেন। তারপর তিনি কৃষ্ণকে বললেন, সমস্ত লোকেরই এরকম হোক, তুমি যথাযথ আজ্ঞা প্রদান করো।
পিতার অনুমতি অনুসারে মথুরা নগরীতে কৃষ্ণ সবার মাঝে ঘোষণা করলেন। হে মানবগণ! সূর্য সিংহরাশিতে গমন করলে আকাশে মেঘ উদয় হলে ভাদ্র মাসে কৃষ্ণাষ্টমীতে অর্ধ নিশাভাগে বৃষ রাশিস্থ শশধরে রোহিনী নক্ষত্রে পিতা বসুদেব ও মাতা দেবকীর কোলে আমার জন্ম হয়।
আপনাদের প্রতি প্রীতিবশে আমি আজ থেকে অনুমোদন করলাম- পৌরগণ এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র প্রভৃতি অপরাপর ধর্মালম্বীগণ আট থেকে আশী বছর বয়স অবধি আবাল বৃদ্ধ বনিতা আমার এ জন্ম তিথি ব্রত সাধন করুক। এ ব্রত করলে সবার শান্তি আনন্দ ও নীরোগ হবে।
কৃষ্ণের সেই কথা শুনে সমস্ত লোক জন্মাষ্টমীর দিন উপবাস ব্রত করে কৃষ্ণপ্রীতি সাধনের উদ্দেশে কৃষ্ণগান, কৃষ্ণকথা, যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে লাগল। মধ্যরাত্রি পর্যন্ত মহাসমারোহে নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান চলতে লাগল।
মথুরাবাসীরা কৃষ্ণকে নানা উপহার সামগ্রী দান করতে লাগল। দেবকী বসুদেবের বন্দনা করতে লাগল। দেবকী-বসুদেব উপস্থিত ব্রাহ্মণ পুরোহিত, গায়ক বাদক, স্তবকারী, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন বস্ত্র প্রভৃতি দান করতে লাগলেন।
বিষ্ণুরহস্যে লিখিত আছে, যে ব্যক্তি জন্মাষ্টমী ব্রত করতে বিমুখ, সে ভীষণ বনের মধ্যে সর্প হয়ে বাস করবে। তাছাড়া ইহলোকে ও পরলোকে তার সুখ নেই। নারকীয় যাতনা তার ভাগ্যে থাকে।
ভবিষ্যোত্তর পুরাণে উল্লেখ আছে, শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির মহারাজকে বলছেন, একটি মাত্র জন্মাষ্টমীর উপবাস করলে সাত জন্মের অর্জিত পাপরাশি থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং সন্তান সন্ততি, আরোগ্য ও অতুল সৌভাগ্য লাভ হয়।
জন্মাষ্টমী পরায়ণ ব্যক্তিদের বংশে রূপবান ও হৃদয়বান মহাত্মার জন্ম হয়।’ কলকাতার কৃষ্ণভক্তি পরায়ণ গৌরমোহন দে ও রজনী দেবী জন্মাষ্টমী দিনে নিজগৃহে রাধাগোবিন্দ সেবায় যুক্ত ছিলেন। পরদিনই তাঁদের পুত্র স্বরূপে জন্মগ্রহণ করেন এক হৃদয়বান মহাত্মা শ্রীঅভয়চরণ।
ভবিষ্যোত্তর পুরাণে আরো বলা হয়েছে, জন্মাষ্টমীতে স্নান, দান, হোম, স্বাধ্যায়, জপ, তপ প্রকৃতি যে কোনো কার্যের অনুষ্ঠান করা যায়, সেই সমস্ত শতগুণ ফলপ্রদ হয়। ব্রহ্মপুরাণে পূর্বখণ্ডে জন্মাষ্টমী মাহাত্ম্যে শ্রীসূত গোস্বামী বলেছেন শ্রীকৃষ্ণাষ্টমী হলো বৈষ্ণব তিথি। ঐ তিথির স্মরণ গ্রহণ করলে কলিযুগের মানুষ বিশুদ্ধ হয়।
আমাদের সমাজে জন্মাষ্টমী ব্রত উপবাস কেউ কেউ আগের দিন কেউ কেউ পরের দিন করেন। কোন দিন কর্তব্য, সেই ব্যাপারে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে ভোরের বেলা একটু সপ্তমী আর সারা দিন-রাত অষ্টমী তিথি থাকলেও ঐ সপ্তমী যুক্ত অষ্টমী তিথিতে ব্রত উপবাস একেবারেই নিষিদ্ধ।
বরং পরের দিন ভোর পর্যন্ত অষ্টমী তিথি, তারপর সারা দিন-রাত নবমী থাকলেও সেই দিন নবমী যুক্ত অষ্টমী তিথিই ব্রত পালনের উপযুক্ত বলে গ্রহণ করতে হবে। আর রোহিনী নক্ষত্রযুক্ত সপ্তমী বিরহিত শুদ্ধ অষ্টমী যদি হয়, সেই অষ্টমী পরদিন ভোর অবধি থাকলেও পূর্ব দিনেই ব্রত উপবাস করতে হয়। কিন্ত সপ্তমী যুক্ত অষ্টমীর দিন জন্মাষ্টমী ব্রত উপবাস পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
- আরও পড়ুন:
- 👉 ৫০ টি সেরা শুভ জন্মাষ্টমী শুভেচ্ছা বার্তা, স্ট্যাটাস ও ছবি
- 👉 ৫ টি সেরা জন্মাষ্টমী নিয়ে কবিতা
জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি
জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধুপর্ক, আসন-অঙ্গুরী-সহ পুজোর আয়োজন করতে হয়। এইদিনে উপবাসে থেকে উপকরণগুলি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়।
জন্মাষ্টমীর আগের দিন নিরমিষ খেয়ে সংযম পালন করতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভাল করে মুখ ধুয়ে ঘুমোতে হবে।
জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ পালন করতে হয়। উপবাস থেকে হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ এবং ভাগবত পাঠ করতে হবে।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্রত পারণ মন্ত্র পাঠ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদ দিয়ে ব্রত সমাপ্ত করবেন।
ব্রতভঙ্গের পর নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়। এই দিনে কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাগুলি জন্মাষ্টমিতে মেনে চললে চললে মিলবে সুফল দূর হবে সমস্যা।
জন্মাষ্টমী পূজার মন্ত্র
হাতের তালুতে দু-এক ফোঁটা জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে পান করবেন। মোট তিন বার এইভাবে জল পান করতে হবে। তারপর করজোড়ে বলবেন—
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
জল শুদ্ধি:
ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।।
পুষ্প শুদ্ধি:
পুষ্পে পুষ্পে মহা পুষ্পে সুপুষ্পে পুস্পসম্ভবে
পুষ্পোহী চায়াব কীর্ণে চ হুং ফট স্বাহা।।
আসন শুদ্ধি:
যে আসনে বসিয়া পূজা করিবে, তাহার নিম্নে ত্রিকোণ মণ্ডল লিখিয়া আসনের উপর একটি পুষ্প দিয়া পাঠ করিবে, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁহ্রীঁ আধার শক্তি-কমলাসনায় নমঃ।
তৎপরে আসন ধরিয়া পাঠ করিবে, – আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুর্ম্মো দেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ।
অনন্তর হাত জোড় করিয়া পাঠ করিবে, – ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকাদেবি ত্ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্।
তারপর পবিত্র বাদ্য ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে স্বস্তিবাচন করবেন—
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ পূণ্যাহং ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ পূণ্যাহং ওঁ পূণ্যাহং ওঁ পূণ্যাহং।
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
ওঁ কর্তব্যেঽস্মিন্ শ্রীশিবপূজাকর্মণি ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ব্রুবন্তু।
ওঁ ঋদ্ধতাম্ ওঁ ঋদ্ধতাম্ ওঁ ঋদ্ধতাম্।
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
এরপর হাত জোড় করে বলবেন—
ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা।
পবনো দিক্পতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।।
এরপর জলশুদ্ধি করে নেবেন। জলশুদ্ধির মাধ্যমে সূর্যমণ্ডল থেকে সকল তীর্থকে জলে আহ্বান করে জলকে পবিত্র করা হয়। তারপর সেই পবিত্র জলে পূজার কাজ হয়। ঠাকুরের সামনে নিজের বাঁ হাতের কাছে কোশা রেখে তাতে জল দেবেন। সেই জলে আলতো করে ডান হাতের মধ্যমা আঙুল ঠেকিয়ে (নখ যেন না ঠেকে)
বলবেন— ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু। তারপর সেই জলে একটা সচন্দনফুল দিয়ে মনে মনে তীর্থদেবতাদের পূজা করবেন। এতে সকল তীর্থের পূজা করা হয়ে যায়। তীর্থপূজা সেরে নিয়ে সেই জল নিজের মাথায় একটু দেবেন। তারপর পূজার সকল দ্রব্যে ছিটিয়ে সব কিছু শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দ্যেশ্যে একটু জল শিবলিঙ্গে দেবেন।
সূর্যকে জল দিয়ে সূর্যপ্রণাম করবেন—
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।।
তারপর একে একে গণেশ, শ্রীগুরু, শিব, সূর্য, নারায়ণ, দুর্গা, নবগ্রহ, দশমহাবিদ্যা, দশাবতার, সর্বদেবদেবী ও আপনার ঠাকুরের আসনে অন্যান্য ঠাকুরদেবতা থাকলে তাঁদেরকে এবং আপনার ইষ্টদেবতাকে প্রত্যেককে একটি করে সচন্দন ফুল দিয়ে পূজা করবেন।
গনেশের প্রনামঃ
ঔঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজানন।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।
গুরু প্রনামঃ
ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।১
অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া।
চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।২.
গুরু ব্রক্ষা গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রক্ষ
তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।৩
শিবের প্রনাম মন্ত্রঃ-
ওঁ নমস্তভ্যঃ বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুসে নমঃ।
পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ ।।
নমত্রিশূলহস্তায় দন্ড পাশাংসিপাণয়ে ।
নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ ।।
ওঁ বানেশ্বরায় নরকার্ণবতারনায় , জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায় ।
কর্পূরকুন্ডবলেন্দুজটাধরায় , দারিদ্রদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ।।
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে ।
নিবেদয়ানি চাত্মানংত্তৃংগতিপরমেশ্বরঃ ।।
দূগা প্রণামঃ
ওঁ জয়ন্তি,মঙ্গলা, কালী,ভদ্রকালী,কপালিনী।
দূর্গা,শিবা,ক্ষমা,ধাত্রি,স্বাহা স্বধা নমোহস্তুতে।।
নারায়ণের প্রনামঃ
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।।
সূর্যপ্রণাম:
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোঽস্মি দিবাকরম্।।
কৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র
শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান:
(ক) বন্দে বৃন্দাবন গুরু কৃষ্ণ কমল লোচনম্ ।
পীতাম্বরং ঘণশ্যামং বনমালা বিভুষিতাম্ ।।
শ্যামং শান্তং দ্বিভুজং মুরলী ধরং ।
রচিতং তিলকং তালে বিভ্রতং মণ্ডলাকৃতিম্ ।।
তরুণাদিত্য-সঙ্কাশং-কুণ্ডলাভ্যাং বিরাজিতম্ ।
শ্রীধাম-সুধাম সুবল স্তোক কৃষ্ণার্জ্জুনাবৃতম ।।
গোপী বল্লভ মধ্যস্থং রাধিকা প্রাণ বল্লভম্ ।
(খ) ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা রুপ বেণু রন্ধ্র কর পল্লাম্ ।
গোপী মণ্ডল মধ্যস্থং শোভিত শ্রীনন্দ নন্দনম্ ।।
শ্রীকৃষ্ণের বীজ মন্ত্র ও উপকরণ নিবেদন মন্ত্র-
মূল বীজ মন্ত্র- ক্লীঁ।
জপের বীজ মন্ত্র-ক্লীদ কৃর্ষ্ণায় স্বাহা । ক্লীঁ কৃষ্ণায় নমঃ ।
ক্লীঁ কৃষ্ণায় স্বাহা । ক্লীঁ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় স্বাহা ।
ক্লীঁ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় গোপীজন বল্লভায় স্বাহা । বল্লভায় স্বাহা ।
শ্রী কৃষ্ণের কাম গায়ত্রী-
ওঁ ক্লীঁ (নমঃ ক্লীঁ) কামদেবায় বিদ্মহে পুষ্প বানায় ধীমহি তন্নোহনঙ্গঃ প্রচোদয়াৎ ।
উপকরণ নিবেদন মন্ত্র- নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ।(বা স্ব-কৃষ্ণ মন্ত্র)
শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্র (বীজ মন্ত্র) ১০৮ বার জপ করিবেন ।
সপর্পন মন্ত্র- গুহ্যাতি গুহ্য গোপ্তাত্বং গৃহানাস্মৎ কৃতং জপং ।
সিদ্ধি ভবতু মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দন ।।
একটু জল হস্তে লইয়া-এতং জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় অর্পনমস্তু বলিয়া শ্রীকৃষ্ণের হস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জল অর্পন করিবেন ।
ক্ষমা প্রার্থনা- নমো যদক্ষরং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বং সর্বং ত্বং প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে ।।
প্রণাম মন্ত্র স্মরণ করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ-
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধো দীন বন্ধো জগৎ পতে ।
গোপেশ গোপিকা- কান্ত রাঁধা কান্ত নমোহস্তু তে ।।
শ্রীকৃষ্ণের পূজার্চ্চনার নিয়ম-
ধ্যানানুরুপ মুর্তিতে শ্রীকৃষ্ণের পূজার্চ্চনাদি করিবেন । এই শ্রীকৃষ্ণের মূর্ত্তি- দ্বিভুজ, মেঘের ন্যায় শ্যামবর্ণ, ত্রিভঙ্গ । অর্থাৎ স্থান ত্রয়ে বক্র অ মোহনা-কৃতি বংশীধারী । বন-মালায় সুসজ্জিত ।
শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন । পরে শ্রীকৃষ্ণের কাম গায়ত্রী পাঠ করিয়া উপকরণ নিবেদন করিবেন
প্রণাম মন্ত্র- বসুদেব সুতং দেবং কংসচানুরমর্দ্দনম্ ।
দেবকী পরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্ গুরুম্ ।।
শ্রী কৃষ্ণের কাম গায়ত্রী-
ওঁ ক্লীঁ (নমঃ ক্লীঁ) কামদেবায় বিদ্মহে পুষ্প বানায় ধীমহি তন্নোহনঙ্গঃ প্রচোদয়াৎ ।
উপকরণ নিবেদন মন্ত্র- নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ।(বা স্ব-কৃষ্ণ মন্ত্র)
শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্র (বীজ মন্ত্র) ১০৮ বার জপ করিবেন ।
উপকরণ নিবেদন মন্ত্র- নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ।(বা স্ব-কৃষ্ণ মন্ত্র)
শ্রীকৃষ্ণকে বসিবার জন্য আসন নিবেদন করিবেন ।
আসনঃ- ইদং আসনং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নিবেদয়ামি নমঃ, বলিয়া নিবেদন করিবেন ।
একটি সচন্দন পুষ্প হস্তে লইয়া শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করিয়া প্রথম পুষ্পটি নিজ মস্তকে এবং দ্বিতীয় বার ধ্যান করিয়া আর একটি পুষ্প শ্রীকৃষ্ণের প্রতিছবি বা শ্রীমূর্ত্তির চরণে অর্পন করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের পূজার উপকরণ নিবেদন-
জল- এতৎ পাদং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া পাদ পদ্মে জল নিবেদন করিবেন, দুইবার ।
শ্রীকৃষ্ণের কাম গায়ত্রী পাঠ করিয়া উপকরণ নিবেদন করিবেন ।
অর্ঘ্যঃ- এষ অর্ঘ্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া অর্ঘ্য নিবেদন করিবেন ।
আচমণঃ- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন ।
চন্দনঃ- এষ গন্ধঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । চরণ দ্বয়ে দুইবার ও
পুষ্পঃ- এতৎ সচন্দন পুষ্পং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ দুইবার ও
মাল্যঃ- এতৎ সচন্দন পুষ্প মাল্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ ও
তুলসীঃ- তুলসী ইদং সচন্দন তুলসী পত্রং নমঃ কঈ শ্রী কৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া । দুইটি বা আটটি তুলসী পত্র চিৎ করিয়া চরণদ্বয়ে নিবেদন করিবেন ।
ধুপঃ- এষ ধুপঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নিবেদয়ামি নমঃ । ও
দীপঃ- এষ দীপঃ নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া নিবেদন করিবেন ।
শ্রী কৃষ্ণকে ভোগের সামগ্রী নিবেদন করিবেন –
আচমন- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । নৈবদ্যে ও পানীয় জলে তুলসী পত্র নিবেদন, তৎপর উভয় পাত্রে ১০ বার মূল মন্ত্র স্মরনান্তে নিবেদন করিবেন ।
নৈবদ্যঃ- “ইদং সঘৃত সোপকরণ আমান্নঃ নৈবেদ্যং নমঃ” ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বা ইদং সঘৃত সোপকরণ অন্নব্যঞ্জন নৈবদ্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া নিবেদন অরিবেন ।
পানীয় জল- ইদং পানীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । (ভোজনের পর আচমনীয় জল নিবেদন করিবেন ।)
আচমনঃ- ইদমাচমনীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন ।
তাম্বুল- এতৎ তাম্বুলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ, বলিয়া দিবেন ।
আচমনঃ- ইদং পানীয় জলং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ বলিয়া জল নিবেদন করিবেন । আরতি ও আরতি কীর্ত্তনাদি করিবেন-
পূজা সমাপনের সময় হস্তে একটু জল লইয়া শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে চরণে জল অর্পন করিবেন ।
মন্ত্র যথা- “এতৎ পাদ্যং নমঃ ক্লীঁ শ্রীকৃষ্ণায় অর্পণমস্তু” বলিয়া হস্তের জল শ্রীকৃষ্ণের চরণের উদ্দেশ্যে অর্পণ করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা- নমো যদক্ষরং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বং সর্বং ত্বং প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে ।।
শ্রীকৃষ্ণকে শয়নের জন্য শর্য্যা নিবেদন করিবেন । শর্য্যাকে গন্ধ ও পুষ্পাদি দিয়া সুসজ্জিত করিবেন ।
প্রণাম মন্ত্র স্মরণ করিয়া শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিবেন ।
শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ-
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধো দীন বন্ধো জগৎ পতে ।
গোপেশ গোপিকা- কান্ত রাঁধা কান্ত নমোহস্তু তে ।।
শ্রীকৃষ্ণের প্রদক্ষিণ মন্ত্রঃ-
হা কৃষ্ণ রাধিকা কান্ত গোবিন্দ মধুসূধন ।
প্রদক্ষিণং করোমি ত্বাং করুনাং কুরু মাধব ।।
শ্রীগুরু দেবতা ও শ্রীকৃষ্ণের ডাইন পার্শ্ব দিয়া প্রদক্ষিণ মন্ত্র বলিতে বলিতে কর জোড়ে চারিবার প্রদক্ষিণ করিবেন । প্রতি ফিরে সন্মুখ হইলে কর জোড়ে প্রণাম করিবেন । শেষবার চরণে প্রণাম করিবেন । (প্রদক্ষিণ মন্ত্র বা হরি নাম করিতে করিতেও প্রদক্ষিণ করিতে পারিবেন ।)
শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা-
হে গোবিন্দ আপনার আপার করুণার দয়ায় এই দুর্ল্লভ মানব জনম লাভ করিয়াছি, সংসার মায়া জালে আবদ্ধ হইয়া, এই ক্ষণস্থায়ী মানবজনম বিফলে হারাইয়াছি, হে গোবিন্দ আপনি অগতির গতি পতিত পাবন, নিজ গুণে কৃপা করিয়া পতিতকে আপনার চরণে স্মরণাপন্ন হওয়ার মত শক্তি প্রদান করুণ ।
শ্রীকৃষ্ণের চরণামৃত লওয়ার মন্ত্র-
ওঁ অকাল-মৃত্যু-হরণং সর্ব্ব ব্যাধি-বিনাশনং ।
কৃষ্ণ পাদোদকং পীত্বা শিরসা ধারয়াম্যহং ।।
শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পূজার মন্ত্র , ব্রত কথা ও পূজা পদ্ধতি : সম্পর্কে জানতে পেরে আপনাদের কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন যদি পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।