WhatsApp Channel
Follow Now
Telegram Group
Follow Now
Last updated on July 4th, 2023 at 12:49 am
আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে Bengali Ghost Story For Child অর্থাৎ ছোটদের একটি ভূতের গল্প শেয়ার করবো। গল্পটির নাম “নীল পাহাড়ে আতঙ্ক” আশাকরি আপনারা সকলে গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং গল্পটি যদি শুনতে চান তাহলে পরে নীচে দেওয়া অডিও ফাইলে ক্লিক করে শুনতে পারেন।
Bhuter Golpo পড়তে ছোট বড় সকলেরই ভালো লাগে। তাই আজকে একটি সত্যি কারের ভুতের গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। আরও Bangla Story এবং Bengali Love Quotes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।
আজকের গল্প – নীল পাহাড়ে আতঙ্ক
পেপারটা খুলতেই খবরের শিরোনাম “নীল পাহাড়ে আতঙ্ক।” রজত কফির কাপটা নিয়ে নড়েচড়ে বসলো। ভালো করে খবরটা পড়তে শুরু করলো।
উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম নিশ্চিন্তা। গত তিন মাস ধরে অদ্ভুত ভাবে মানুষের মৃত্যু শিহরণ জাগাচ্ছে গোটা জেলায়। ভয় পেয়ে গ্রাম থেকে মানুষ পালিয়ে আসছে। আশ্রয় নিচ্ছে অন্য গ্রামে। রাত হলেই ভয়ংকর বিভীষিকা গ্রাস করছে গোটা গ্রামকে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়ি নিশানায়। মৃত্যু হচ্ছে পরিবারের সকলের।
রহস্যের গন্ধ পেলো রজত। রজত ভট্টাচার্য পেশায় একজন জ্যোতিষী। নেশায় তান্ত্রিক। আবার ভূতান্বেষীও বলা যেতে পারে। খবর কাগজটা রেখে নিজের সাধনার ঘরে বসে একাগ্র চিত্তে ধ্যানে মগ্ন হলো রজত। চোখের সামনে নিশ্চিন্তায় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনা ভেসে উঠতে লাগলো। প্রচন্ড সাহসী রজতও শিউড়ে উঠলো।
প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রওনা দিলো নিশ্চিন্তার উদ্দেশ্যে। নেশায় ভূতান্বেষী তাই বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে আঞ্চলিক ভাষা ওর রপ্ত।
আজও গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে একদল মানুষ হৈ হৈ চিৎকার করে ছুটে এল পাহাড়ের কাছে। কিন্তু যেই না নীল পাহাড়ের সামনে এলো নিঃশব্দে বোবা হয়ে গেল সবাই। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। রাতের অন্ধকারে জ্বলন্ত মশালের আলো ছাড়া আর কোথাও কোনো আলোর চিহ্ন নেই।
আরও পড়ুনঃ
গ্রামের নাম নিশ্চিন্তা, উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলায় এই গ্রাম। গোটা গ্রামটাকে ঘিরে এই নীল পাহাড়। অপূর্ব সুন্দর এই পাহাড়। নীল পাহাড় নাম এই কারণেই বহু বহু যুগ আগে স্বয়ং নীলকন্ঠ এই পাহাড়ে সাধনা করেছিলেন। গ্রামের মানুষজন তাদের পূর্বপুরুষের থেকে এই গল্প শুনে আসছে। নিশ্চিন্তা গ্রামে বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষ বসবাস করে।
খুব গরীব এই গ্রামটা, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গোরু, ছাগল, মুরগি পোষে। আর কিছু চাষ করে কোনো রকমে দিন কেটে যায় গ্রামের মানুষের। অভাব অনটনের জন্যে প্রত্যেক দিন সবার বাড়িতে ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকতো। অথচ কিছু বছর আগে গ্রামের পরিবেশটাই অন্য রকম ছিল। সুখ ছিল শান্তি ছিল। অর্থাভাব থাকলেও নিজেদের মধ্যে বড় মিলমিশ ছিল।
এই ভাবে দিন মাস বছর পার হয়, গ্রামের লোকেরা দিন গুনত, কবে সুদিন আসবে এই গ্রামে। গ্রামে লোকেদের সেই ভাবনার অবসান হলো একদিন।
মাস তিনেক আগের কথা, গ্রামের প্রত্যেকটা লোকের মুখে মুখে বলাবলি হতে লাগল যে ওই নীল পাহাড়ের গুহার মধ্যে কোনো এক সিদ্ধ পুরুষ এসেছেন। কিন্তু সেই যোগী কোথা থেকে এসেছেন, কি উদ্দেশ্যে এসেছেন, তা কারোর জানা নেই, এমন কি কেউই তাকে কখনো দেখেনি।
এর আগে এমন ঘটনা আগে কখনো হয়েছে বলে কারোর মনে পড়ছে না। তাই গ্রামের মানুষের চোখে মুখে চাপা আতঙ্কের ছাপ। গ্রামের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করলো ওই নীল পাহাড়ের গুহায় তারা যাবে। সেই মত পরের দিন গ্রামের সমস্ত লোকজনেরা একজোট হয়ে নীল পাহাড়ের রওনা দিলো।
পাহাড়ের চূড়াতে রয়েছে এই সেই গুহা, আর পাহাড়টাও বেশ উঁচু বলে, গ্রামের লোকেরা সচরাচর খুব একটা কেউ আসে না এই গুহার কাছে। একে একে করে সবাই অতি কষ্টে গুহায় কাছে এসে পৌঁছায়।
গুহায় দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না বলে বেশ অন্ধকারাছন্ন হয়ে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে একটা অজানা ভয়ে একে অপরকে আতঙ্কের চোখে দেখলো।
কিছুক্ষণ পর সবাই গুহার মধ্যে চোখ রাখতে দেখতে পেল আবছা অন্ধকার গুহার ভেতরে মাথা ভর্তি চুলে জটা, মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, চোখ দুটো ধূসর লাল,গলায় রুদ্রাক্ষর মালা, আর কোমরে একটা লাল কাপড় জড়ানো এক সিদ্ধ পুরুষকে। যাকে দেখে গ্রামের সবাই চমকে ওঠে।
তৎক্ষণাৎ কয়েক পা পিছিয়ে এসে, নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলাবলি করতে লাগলো নিশ্চয় কিছু উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন। কিন্তু কেউ আর সাহস করে ওই যোগীকে কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারছে না কেন এই গুহায় এসেছে বা কি তাঁর উদ্দেশ্য। সাহস করে গ্রামের মোড়ল জিজ্ঞাসা করে ফেললো “আপনি কে? কেনই বা এখানে এসেছেন?”
একসাথে এতগুলো প্রশ্নবান, এতটুকুও বিচলিত করলো না ওই যোগী কে। বরং নীরব হয়ে স্থির ভাবে তাকিয়ে রয়েছে গ্রামের লোকেদের দিকে। বেশ খানিকক্ষণ বাদে যোগী বললেন, “আমি এক বিশেষ তন্ত্র সাধনার জন্য এই পাহাড়ে এসেছি। এই পাহাড়টা খুব শান্ত নিরিবিলি পাহাড় আর স্বয়ং মহাদেবের অবস্থান এই পাহাড়ে।”
যোগী কথাগুলো বলে শেষ করতে পারলো না গ্রামের লোকেরা একসাথে বলে “এখানে কোনো তন্ত্র সাধনা হবে না।” সেই মুহূর্তে কাপালিক বলে উঠে, “তোদের গ্রামে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ঝগড়া অশান্তি প্রতিদিন লেগে থাকে। আর প্রত্যেকের ঘরে অভাব অনটন আছেই। তোরা চাস না তোদের গ্রামে একটু সুখ শান্তি ফিরে আসুক।”
এই কথা শোনার পর গ্রামের লোকেরা সবাই চুপ হয়ে গেল সেইমুহূর্তে। গ্রামের সমস্ত লোকের সরল মনে কয়েকটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, এই যোগী আমাদের গ্রামে সমস্ত কিছুই বলে দিলো কিভাবে? যেন কোনো স্বয়ং বিধাতা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজেদের গ্রামে সুখ শান্তি কে বা না চায়, তাই সবাই এক সাথে বলে “আপনি এর প্রতিকার করুন, আপনি তো একজন সিদ্ধ পুরুষ। আপনি এর প্রতিকার করতে পারবেন।”
তখনই যোগী বলল “বেশ আমি এই গ্রামে সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনব, তবে একটা কথা তোদের কে রাখতে হবে।”
গ্রামের সমস্ত লোকজনেরা বলে ওঠে “কি কথা?”
যোগী বলল, “গ্রামের সুখ শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমার সাধনার জন্য একটা জীবের প্রাণ সমর্পন করতে হবে।”
যোগীর কথাটা শোনা মাত্রই সেই মুহূর্তে গ্রামের মানুষদের মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
যোগী গ্রামের মানুষের মনের কথা বুঝতে পেরে, পরক্ষণেই বলে “এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি ভয় পাওয়ার মত কিছুই বলিনি।”
গ্রামের এক মাঝবয়সী লোক জিজ্ঞাসা করেন “আপনি সেই জীবটা কে নিয়ে কি করবেন?”
কথাটা শোনা মাত্রই যোগীর বিকট অট্টহাসিতে পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় আঘাত লাগলো । গ্রামের লোকেদের হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেল।
পরক্ষণেই যোগী হাসি থামিয়ে বললো, “আমি ঐ প্রাণীটার তাজা রক্ত আমার সাধনার উদ্দেশ্যে কাজে লাগবো। আমি যে প্রাণীর কথা বলছি সেটা তোদের সবার বাড়িতে আছে এমন প্রাণী। বাড়িতে পোষা প্রাণী না হলে আমার তন্ত্রসাধনা সম্পূর্ন হবে না,আর আমার সাধনা সম্পূর্ন না হলে তোদের গ্রামে সুখ শান্তি ফিরবে না।”
তারপরেই গ্রামের লোকেদের মধ্যে গুঞ্জন হতে থাকে সবার বাড়িতে গোরু, ছাগল,মুরগি ছাড়া আর তো কিছু নেই। কিন্তু কে বা নিজের ঘরের পোষা প্রাণীকে এই যোগীর হাতে সমর্পণ করবে।
খানিকক্ষণ পর একজন বললো “ঠিক আছে আমার ঘরের মুরগিটা আপনার তন্ত্র সাধনার জন্য সমর্পন করবো, কিন্তু আমাদের গ্রামে কোনো ক্ষতি হবে না তো? আর গ্রামে সুখ শান্তি ফিরবে?”
যোগী তখন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললো “হ্যাঁ এই গ্রামে সুখ শান্তি ফিরবে, আর কারোর কোনো ক্ষতি হবে না।”
গ্রামের সমস্ত লোকজনেরা বললো “তবে কবে হবে আপনার এই তন্ত্র সাধনা।”
“আমি সামনে অমাবস্যায় রাত্রিতে আমার সাধনা করবো। তবে ওই দিন এই গুহায় কাউকে আসা যাবে না, আমাকে অমাবস্যার আগের দিন প্রাণী টাকে দিয়ে দিতে হবে।”
গ্রামের সবাই একসাথে বললো “ঠিক আছে তাই হবে।”
তারপর সকলে ওই গুহা থেকে বাড়ি ফিরে এল। দুদিন বাদে অমাবস্যা, তাই অমাবস্যার আগের দিন গ্রামের কয়েকজন মিলে একটা মুরগি নিয়ে গিয়ে যোগী কে দিলো। যোগী ওই অবলা প্রাণীটা নেবার পর ওদের কে চলে যেতে বললো। ওরা সবাই মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে এল।
অমাবস্যার দিন সকাল থেকে আকাশে কাক শকুনের দল গোটা গ্রাম জুড়ে ঘুরপাক খেতে থাকে। যেন মনে হচ্ছে গ্রামে মোড়ক লেগেছ। গ্রামবাসীদের অজান্তে গোটা গ্রামে আতঙ্কের করাল ছায়া ক্রমশ গ্রাস করেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। দিনের বেলায় মনে হচ্ছে কত না রাত্রি, চারিদিকে নিঃশব্দ, যে গ্রামে কত না হৈ হুল্লোড় হত, কত বাচ্চারা খেলা করত মাঠে, তা আজ একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে।
একদিনে নিশ্চিন্তা গ্রামটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে। দিনের আলো পশ্চিম আকাশে ডুব দিলো, ক্রমশ অন্ধকার গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো। নিস্তব্ধে ঘন অন্ধকারে গোটা গ্রামটা কে ঘিরে ফেলেছে। শুনশান গ্রামে মাঝে মাঝে কুকুর শিয়ালগুলো কিসের যেন অজানা ভয়ে তারস্বরে চিৎকার করে চলেছে। আর তা বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে আরো ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিটা মুহূর্তে একটা ঘোর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে রাতটা কোনোক্রমে পার হলো সবার।
ভোরের আলোর ছিটে ফোঁটা গ্রামে আসতে গ্রামের সমস্ত লোকেরা একে অপরের খোঁজ নিতে থাকে, কারোর বাড়িতে কোনো অঘটন কিছু হয়েছে কিনা। গ্রামের মানুষের কোনো অঘটন কিছু ঘটেনি, সবাই ভালো আছে। তারপরেই গ্রামে সকলে আনন্দের উল্লাসে মেতে ওঠে। আজ থেকে যে নিশ্চিন্তা গ্রামে ঘরে ঘরে সুখ শান্তি ফিরে পাবে। হায়রে গ্রামবাসী বিধাতার লেখন যে অন্য কিছু। একটু বেলা গড়াতে গ্রামের প্রায় সকলেই মনের আনন্দে নীল পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দিলো।
নীল পাহাড়ের গুহায় আসা মাত্রই সবাই ভয়ঙ্কর আতঙ্কে ঠিকরে উঠল। আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে কোনোক্রমে পাহাড় থেকে নেমে গেল। নীল পাহাড়ের গুহার কাছে আসতেই দেখলো সেই যোগীর রক্তাক্ত নিথর দেহটা পড়ে আছে।
চোখ দুটোকে কোনো এক শিকারি নেকড়ে খুবলে নিয়েছে, আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে হা করে থাকা মুখটার ভেতরে পড়ছে। বুকের মধ্যে খুবলে খুবলে মাংস তুলে নিয়েছে। অবলা প্রাণীটার গলা,ধর দুদিকে হয়ে গেছে। পাহাড়ের গুহার চারপাশে রক্ত, তন্ত্র সাধনার দ্রব্য সামগ্রীগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
গ্রামবাসীরা কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না। ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে, শুধুই সবার চোখে মুখে গভীর আতঙ্কের ছাপ। ওই অবস্থায় গুহার মধ্যে যোগীকে ফেলে রেখে যে যার মরণ দৌড়ে বাড়ির দিকে পালাতে লাগল।
নীল পাহাড়ের গুহায় এমন ঘটনা প্রথম, তাই গ্রামের মানুষেরা ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকতে লাগলো। কিন্তু পাহাড়ের গুহার এইরকম মর্মান্তিক ঘটনার কোপ নিশ্চিন্তার গ্রামের ওপর পড়লো কিছু দিন পর থেকে।একের পর এক গ্রামের মানুষ থেকে পশু কেউ বাদ গেল না, এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু থেকে।
বৃদ্ধ ব্রজ সুবুদ্ধি কথাগুলো আধা ওড়িয়া আর বাংলা মিশিয়ে বললেন।
রজত জিজ্ঞাস করলো “তারপর, তারপর কী হলো?”
“সেদিনও ঠুয়ো লোকোমানে মরিবারে লাগি ছন্তি। সবাই প্রায় গ্রাম ছেড়ে দিয়েছে। বাপ ঠাকুরদার ভিটে, ছেড়ে যাই কেমনে তাই কামড়ে পরে আছি।” ব্রজবাবু বললেন।
রজত নীলপাহাড়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। বৃদ্ধ ব্রজবাবু বললো, “তুমারও হাত ধরিথি কুহুছি সেঠিকি যাও নি বিপদ আছি।”
রজত বললো কিচ্ছু হবে না আমার। আমি আজীবন এই সবের সন্ধানে ঘুরে বেরিয়েছি। বিপদ আমাকে সহজে গ্রাস করে না। মা চামুন্ডা সর্বদা আমায় রক্ষা করেন।
সেই দিন গভীর রাতে রজত রওনা দিল নীল পাহাড়ের গুহায়। রজত গুহায় আসার পর স্পষ্ট বুঝতে পারলো ওর আশেপাশে অদৃশ্য ভাবে কেউ একজন আছে। নিঃশব্দ রাতের অন্ধকারে গুহায় কে থাকতে পারে তা এতটুকু বুঝতে অসুবিধা হল না রজতের। স্বয়ং চামুন্ডা যার সহায় তার আবার কিসের ভয়।
রজত বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে গুহার সামনে তাড়াতাড়ি করে একটা যজ্ঞ কুন্ডু তৈরি করে নিলো, ওর নিয়ে আসার সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী ব্যাগ থেকে বের করে যজ্ঞ কুন্ডুর সামনে রাখলো। হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর চিৎকার নিস্তব্ধ বাতাসে পাহাড়ের প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। রজত কুমুন্ডলের গঙ্গাজল নিয়ে গুহার চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো।
তারপর ওই যজ্ঞ কুন্ডুর সামনে বসে মা চামুন্ডা কে আহ্বান করলো মনে মনে। পরমুহূর্তে রজতের আহ্বান পেয়ে মা চামুন্ডা স্বয়ং রজতের রক্ষা কবজ হয়ে বিরাজ করলো এই গুহায়।তারপর মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডুতে ঘি, বেলপাতার আহুতি দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পাহাড় কাঁপিয়ে প্রচন্ড বেগে একটা ঝোড়ো হাওয়া রজতসহ যজ্ঞ কুন্ডুকে তছনছ করতে চায়।
কিন্তু তা হওয়ার নয়, যেখানে স্বয়ং মা চামুন্ডা বিরাজমান। পরক্ষণে পাহাড়ে একটা ভয়ঙ্কর আর্তনাদ বাতাসে ভেসে এল। যেন কোনো পাহাড় ভেঙে গেলো। তারপরেই যজ্ঞ কুন্ডুর লেলিহান শিখার ওপর একটা অবয়ব দেখতে পেলো রজত। আর সেই অশরীরী অবয়ব বলতে আরম্ভ করলো “মু দেবী, এই গাঁরো ঝিও। মু বয়সো পনেরো।”
দেবীর কথাগুলোর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “আমি দেবী, এই গ্রামেরই মেয়ে। আমার বয়স পনেরো। আমার বাবা খুব গরীব, আর আমাদের গোরু ছিল, প্রত্যেকদিন আমি গোরু নিয়ে এই পাহাড়ে কোলে চড়াতে আসতাম। সেদিনও এই পাহাড়ে গোরু চড়াতে এসেছিলাম আর সেইদিন পাহাড়ের ঘুরতে এসেছিল চারজন শয়তান ,আর ওই চারজন হায়না আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে খেয়েছিল। আমার আকুতি ওদের কানে পৌঁছায় নি সেদিন। শরীর থেকে প্রাণ না বেরোনো পর্যন্ত উল্লাস চলেছিল।
সেদিন আমার চিৎকার,আর্তনাদ কেউ শুনতে পায় নি এই গ্রামে। তারপর সেই নিথর দেহটা ফেলে দিল পাহাড়ের এক খাঁজে। আজও পর্যন্ত কেউ খোঁজ করে নি আমি কোথায়? নিজের বাবা মাও না। আর এই যোগী কিনা আমাকে দিয়ে নিজের সিদ্ধিলাভ করবে। তাই যোগীর প্রাণ আমি নিয়েছি, গ্রামের মানুষেরও প্রাণ আমি নেব। এই গ্রামটাকে শেষ করে দেব। কেউ যদি আমার রাস্তায় আসে তাকেও শেষ করব। আমার শরীরের শেষ অবশিষ্ট অংশ টুকু পাহাড়ের খাঁজে এখনো পড়ে আছে।”
দেবীর কথা শেষ হতেই বিকট জোরে হাসি। তারপরেই যজ্ঞ কুন্ডুর অবয়বটা কোথায় মিলিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে গ্রামে ব্রজবাবুর বাড়িতে এসে রজত দেখলো, ব্রজ বাবু কিসের যেন আতঙ্কে রয়েছেন। ‘কি বসতে বলবেন না?”
“এইঠি তুমহে বসো, এবে এই টাইমেরে, এতে সকারু।( ও তুমি বসো, এখন এই সময় এত ভোরে)
রজত বলে আসলে একটা কথা জানার ছিল।
“কড় কথা( কী কথা)?”
“আচ্ছা ব্রজ বাবু এই গ্রামে দেবী নামে কি কোনো মেয়ে ছিল?”
রজতের কথা শোনার সাথে সাথে ব্রজ বাবুর দুচোখ জলে ভরে গেল। রজতের হাত দুটো ধরে বললেন ব্রজবাবু ওড়িয়া আর বাংলা মিশিয়ে যা বললেন তার বাংলা করলে “দেবী আমারই মেয়ে। সেদিন অনেক সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ও বাড়ি ফেরেনি।
আমি খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় চার শহরের বাবুর সাথে দেখা হয়। ওদেরকে আমার মেয়ের কথা জিজ্ঞাস করি। আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে মুখ বন্ধ রাখতে। গ্রামের মোড়লকেও ওরা হাত করে। তাই এতদিন চুপ করে থেকেছি, শুধু স্বপ্নে দুটো হাত আমার গলা জড়িয়ে বাবা বাবা বলে ডেকেছে। ও কোথায় আপনি জানেন?”
ব্রজ বাবুকে একটু শান্ত করিয়ে রজত বলে নীল পাহাড়ের গুহায় আর কেউ নয় আপনার মেয়ের অতৃপ্ত আত্মা ওখানে আছে ,আর সে সবাইকে মারবে কারণ তার প্রতি যে অত্যাচার হয়েছিল তা ক্ষমার যোগ্য নয়। কিন্তু আমাদের দেবীর আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে। আর সেই জন্য আপনার সাহায্য লাগবে রজত বলে থামলো। তৎক্ষণাৎ ব্রজ বাবু বলেন কি করতে হবে বলুন, রজত বললো “আমি আপনাকে নিয়ে যাব নীল পাহাড়ের গুহায় কাছে, সেখানেই পাহাড়ের খাঁজে একটা কঙ্কাল দেখতে পাবেন, ওটাই দেবীর শরীরের শেষ অংশ।
তারপর আমার দেওয়া গঙ্গাজল,বেলপাতা ওই কঙ্কালের ওপর দেবেন তাহলে আপনার মেয়ে মুক্তি পাবে। কেবল মাত্র আপনাকেই এই কাজটা করতে হবে। আর খুব সাবধানে করতে হবে এই কাজটা। কারন ও চায় না ওর শরীরের শেষ অংশ টুকু কেউ স্পর্শ করুক। ও আপনাকে অনেক প্রলোভন দেখাবে আপনি কিন্তু বিন্দু মাত্র বিচলিত হবেন না । না হলে বিপদের শেষ থাকবে না।”
ব্রজবাবু বললেন ঠিক আছে তাই হবে।
আজ রাতের মধ্যেই এই কাজটা করতে হবে।
রাতের অন্ধকারে দুজনে রওনা দিলো নীল পাহাড়ে গুহায়। গুহায় এসে ব্রজবাবু কেমন যেন কাঁপছেন, রজতের ছোঁয়ায় ব্রজবাবু চমকে ওঠেন। তারপর আরও একবার সমস্ত কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিলো ব্রজবাবু কে। বার বার একটা কথা বললো কোনো ভাবে যেন দেবীর কথায় সাড়া না দেওয়া, প্রলোভন না পড়া।
আমি এই গুহার কাছে ধ্যানে বসে থাকব।
ব্রজবাবু কুমুন্ডলে গঙ্গাজল,ও মন্ত্রপূত বেলপাতা নিয়ে পাহাড়ের খাঁজে কঙ্কালের দিকে যেতে লাগলেন। কঙ্কালের সামনে সামনি আসতেই হঠাৎ করে কে বলে উঠল ” বাবা! তুমি কি করছ এখানে? তুমি বাড়ি চলে যাও।” ব্রজবাবু দাঁতে দাঁত চেপে নিজের লক্ষ্য দিকে যেতে থাকেন।
প্রবল জোরে ঝোড়ো হাওয়া ব্রজবাবুকে সামনের দিক থেকে ঠেলে রেখেছে, যাতে না আর সামনে যেতে পারে। যেই না ব্রজবাবু মুখে বললেন ” জয় মা চামুন্ডার জয়!” মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত বাঁধন খুলে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাজল, বেলপাতা ওই কঙ্কালের ওপর দিয়ে দিলেন। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে প্রচন্ড চিৎকারে।
ব্রজবাবু ওখানে বসে অঝোরে কেঁদে ফেলেন, রজত এসে ওনাকে ধরে নীল পাহাড়ের গুহা থেকে বাড়ি নিয়ে আসেন।
নতুন ভোরের আলোয় গোটা নিশ্চিন্তা গ্রামটা আজ যেন ঝলমল করছে। আজ সমস্ত গ্রামের লোকেরা ব্রজবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। গ্রামবাসীদেরকে দেখে ব্রজবাবু সব ভুলে গিয়ে আগামীর স্বপ্নে ডুব দিলেন। নিশ্চিন্তা গ্রামকে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলো ভূতান্বেষী।
Bengali Ghost Story For Child অর্থাৎ ছোটদের “নীল পাহাড়ে আতঙ্ক” ভুতের গল্পটি পরে আপনাদের কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন। যদি গল্পটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।