Bangla Story For Child | ভীতু ছাগলছানা | Bengali Moral Story

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on July 4th, 2023 at 12:49 am

Rate this post
নমস্কার পাঠকগণ এই পোস্টে Bangla Story For Child অর্থাৎ ছোটদের একটি রূপকথার গল্প শেয়ার করবো, গল্পটির নাম “ভীতু ছাগলছানা” আশাকরি আপনারা সকলে গল্পটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং গল্পটি যদি শুনতে চান তাহলে পরে নীচে দেওয়া অডিও ফাইলে ক্লিক করে শুনতে পারেন। সকল অভিবাবকরা তাদের শিশুদের গল্পের দ্বারা তাদের জীবনের সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। নানান ধরনের Bengali Kids Story – এর মাধ্যমে তাদেরকে অনেক রকমের শিক্ষামূলক তথ্য প্রদান করতে পারেন। তাই এই পোস্টে ছোটদের “ভীতু ছাগল ছানা” গল্পটি শেয়ার করলাম। আশাকরি গল্পটি আপনাদের সকলের খুব ভালো লাগবে।

Bangla story for child



Bengali Short Moral Stories Pdf For Child

Bengali story for child




এক যে ছিল ছাগল ছানা। খুব ভীতু। সবসময় সে তার ঘরের আশেপাশেই থাকত। বাইরে যেত কম। বন্ধুরা একদিন খোঁচা দিল— ঘরের বাইরে বেরিয়ে কিছু দেখে এস। জানার আছে অনেক কিছু!
ছাগলছানার মাথাতে ভূত চাপল। ঠিক করল— দূরে, বহুদূরে যাবে সে । মা-বাবা কাউকে কিছু বলল না। এক বিকেলে বেরিয়ে পড়ল। আকাশ মেঘলা । জোরে বাতাস বইছে। একা একা হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা মাথায় করে বনে ঢুকল সে । কী অন্ধকার ভেতরে! লম্বা লম্বা দেবদারু গাছের মাথা কাঁপছে বাতাসে । আকাশ জুড়ে কালো কালো মেঘের পরত। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। কড়..কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ছে।
ছাগলছানা ভয়েই দিশেহারা। এদিক-ওদিক এলোমেলো খানিক ছুটোছুটি করল। সে ভাবল— এবার নির্ঘাত মরণ। খানিক পরেই শুরু হল অঝোর বৃষ্টি । বৃষ্টির তোড়ে যেন ভেসে যাচ্ছে সব। ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে গেল ছাগলছানা।
মনের সব সাহস জড়ো করে ছোটা শুরু করল । বন-জঙ্গল ঝেঁটিয়ে এল এক নদীর পাড়ে। মরণ হবে ভেবেই সে উঁচুমতো একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে সব।
তারপর? তারপর শান্ত হল চারপাশ। রাত পুইয়ে সকাল হল। বৃষ্টিধোঁয়া আকাশ ভেঙে উঁকি দিল রোদুর। ছাগলছানা দেখল চারদিকে শুধু পানি আর পানি। সে ছোট্টমতো একটা দ্বীপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব ভেসে গেছে পানির তোড়ে। অনেক দূরে শুকনো ডাঙা।
আরও পড়ুনঃ Bengali Story For Child
ছাগলছানা সাঁতার জানে না। কোনোকিছু করার নেই তার। সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে। তাই চুপচাপ বসে রইল সে। ঠাণ্ডায় শরীর কাঁপছে। তক্ষুনি দেখতে পেল একটা গোবদা ভেড়া নৌকো চালিয়ে যাচ্ছে। ছাগলছানা চেঁচিয়ে উঠল—
‘আমাকে বাঁচাও, ভেড়া ভাই।’
‘নৌকায় আমার একদম জায়গা নেই।”
গোবদা ভেড়া কথা ক’টি বলে চলে গেল তার নৌকো নিয়ে। ছাগলছানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। কী আশ্চর্য পড়শি হয়ে ভেড়াটা এমন করল! আবার একা একা বসে থাকা— বসে থাকা ।
বদ্ধ পানিতে ভাসছিল দুটো গাছের গুড়ি। তার উপর বসে রক্তখেকো এক নেকড়ে আর তার বউ খানিকটা দূরে খেলা করছিল। হঠাৎ তাদের নজরে পড়ল— দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভয়কাতুরে ছাগলছানাকে ।
‘বাহ! এ রকম একটা কচি ছাগল পেলে ভোজনটা তোফা জমত ’ নেকড়ে জিভ চাটতে লাগল। ওখানে গিয়ে ধরা যায় কীভাবে? নেকড়ে-গিন্নি জানতে চাইল!
‘সাঁতরে গিয়ে ধরতে হবে।’ ‘আমি কিন্তু সাঁতরে যেতে পারব না। তার চেয়ে বরং ডেরায় ফিরে যাই। সবাই মিলে যুক্তি এঁটে তারপর একটি উপায় বের করা যাবে।’
নেকড়ে ও তার গিন্নি তাড়াতাড়ি ফিরে গেল আপন ডেরায় । ছাগলছানা একা-একা বসেই আছে। লতাপাতার ঝোপঝাড় ভেসে যাচ্ছে বেশ খানিকটা দূর দিয়ে। এ রকম একটা ঝোপঝাড়ে চড়ে বসার বুদ্ধি আটল সে। কিন্তু পোড়া কপাল! সামনে দিয়ে যায় না একটাও ।
দুপুর গড়িয়ে চলল। কেউ এল না তাকে উদ্ধার করতে । ‘কোয়াক ! কোয়াক!’ কে যেন মাথার উপরে ডেকে উঠল। ছাগলছানা তাকাল। একটা বাচ্চা হাঁস উড়ছে। কী করছ এখানে? বাচ্চা হাঁসটা শুধাল ।
‘দেখতে পাচ্ছ না!” ছাগলছানা বলল, ‘কেউ আমাকে রক্ষা করবে, এই আশাতেই বসে আছি। আমি উড়তে জানি না, সাঁতারও জানি না।’
ভয় পেয়ো না বন্ধু । বাচ্চা হাঁস জানাল। ধৈর্য ধর। আমরা তোমাকে রক্ষা করব ।”
বেলাবেলি নদীর তীরে তীরে ছড়িয়ে পড়ল ছাগলছানার খবর। দয়ালু পশুপাখিরা ছুটে এল । খরগোশ এল লাফাতে লাফাতে, হামাগুড়ি দিয়ে এল সারস। বেলেহাঁস এল পেলিক্যানদের সঙ্গে নিয়ে। গাধা এল, এল বানর। বাচ্চা হাঁস পুরো ঘটনাটা শোনাল সবাইকে ।
রাজি হল সবাই ।
আমি অবশ্যই রক্ষা করব, বলল খরগোশ । সবাই মিলে সাহায্য করব ওদের । পেলিক্যানদের দিকে তাকিয়ে কথা ছুড়ল বেলেহাঁস ।
সারস জানাল, কিন্তু কীভাবে।
আমরা সবাই মিলে ভেলা তৈরি করব । শিগগির গাছ কাটার কাজে লেগে যাও।”
সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বনের ভেতর তারা কলাগাছ খুঁজে বের করল । শুয়োর এল ধারাল দাঁত নিয়ে। কলাগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে সে আলগা করে দিতে লাগল। গাছগুলোকে গাধা এসে লাগাল পিঠ দিয়ে ধাক্কা । আর সেই ধাক্কায় কলাগাছ একটা একটা করে উপড়ে পড়তে লাগল। চারটি কলাগাছ দিয়ে দিব্যি তৈরি হল একটা ভেলা । বানর নিয়ে এল লতা । কষে বাঁধল সেই ভেলা।
আরও পড়ুনঃ Meghbalika Kobita By Joy Goswami
হঠাৎ করে চড়ুই এল উড়তে উড়তে । “এইমাত্র দেখে এলাম ছাগলছানাকে । জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে চড়ুই বলল, সে কাঁদছে। খুব খিদে তার পেটে । কী করা যায়?
ভাবনায় পড়ল খরগোশরা। সারস বলল, কিছু খাবার পাঠিয়ে দেয়া যাক । বেলেহাঁস জানাল, ‘পেলিক্যান থাকতে চিন্তা কী?
খরগোশ কিছু শালগম, গাজর নিয়ে এল। পেলিক্যান ফাঁক করে ধরল তার বিরাট দুটো ঠোঁট । সেই ঠোঁটে খাবার নিয়ে উড়াল দিল সে।
এদিকে বুলবুলি এসে খবর দিল, তিনটে রক্তচোষা নেকড়ে ছাগলছানাকে ধরার জন্য রওনা দিয়েছে?
কী করা যায়? কী করা যায়? পাখিরা সবাই সমস্বরে বলল, আমরা চল যাই । উপর থেকে পাথর ছুড়ব । নিচে নেমে ঠোকর মারব। দেখি ওদের ঘায়েল করা যায় কিনা ?
তারা তাড়াতাড়ি যে যার কাজ ঠিক করে নিল। বানর দল ভেলা ভাসাল। আকাশপথে দ্রুতবেগে চলল পাখিরা।
নেকড়ে তিনটে গাছের গুড়িতে চেপে চলেছে। মনে তাদের আনন্দ । সেই ছোট্ট দ্বীপের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে তারা। একজন আরেকজনকে বলছে : ‘প্রায় এসেই গেলাম নাকি? ছাগলছানা প্রথম ধাক্কায় আমাদের পেয়ে ভাববে— বুঝি উদ্ধার করতে যাচ্ছি তাকে । কিন্তু বেচারাকে ধরব আর খাব।”
চুকচুক করে তিনজনে জিভ চাটল । এমন সময় মাথার উপর ঝাঁক বেঁধে এল পাখিরা। মুখে তাদের পাথর। ঝুরঝুর করে পড়তে লাগল সে পাথর। বাজ আর ঈগল এসে ঠোকর মারছে নেকড়েদের । কিছু বোঝার আগেই হেলেদুলে নেকড়েরা পড়ে গেল পানিতে । পেলিক্যানরা এল আস্তে-ধীরে। বড় বড় পাথর ওদের ঠোঁটে । টুপ করে ছেড়ে দিল এক-একটি পাথর নেকড়েগুলোর ঘাড়ে। ওদের অবস্থা তখন— ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি । সাঁতরে ওরা গিয়ে উঠল নদীর পাড়ে । ঠোকর খেয়ে চামড়া ছিড়ে গেছে জায়গায় জায়গায় ।
এমন সময় দ্বীপে গিয়ে পৌছল সেই ভেলা। ছাগলছানা তো অবাক । ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জড়িয়ে ধরল সে বানর আর খরগোশদের । তারপর আনন্দে-খুশিতে লুটোপুটি করতে করতে ফিরে এল সবাই। ছাগলছানাকে ওরা পৌছে দিল বাবা-মা’র কাছে। বাবা-মা তো খুঁজতে খুঁজতে সারা । তারা সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাল। তারপর নেমন্তন দিল।
পরদিন নেমন্তন খেতে এল পশুপাখিরা। সেই যে গোবদা ভেড়া— সে-ও এল । ছাগলছানাকে রক্ষা করেনি বলে কেউ ওকে পাত্তাই দিল না। এ রকম স্বার্থপর পড়শিকে কারো দরকার নেই। লজ্জা পেয়ে ভেড়া একা-একা চলে গেল ।
আরও পড়ুনঃ Bengali Short Stories For Child
সে কী গানবাজনা আর হইহুল্লোড়! সারারাত মাতোয়ারা রইল পশুপাখিরা। খেয়ে খেয়ে ঢেঁকুর তুলল আয়েশে। শেষে সবাই যখন যার-যার ঘরে ফিরে গেল, ছাগলছানা তখন ভাবল আগের দিনের কথা। সেই বিপদের কথা। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। কিন্তু তার বুকে যে এত বিপদ বাধা লুকিয়ে আছে, কে জানত। আসলে বাবা-মাকে জানিয়ে গেলে হয়তো এমনটি আর ঘটত না।
Bangla Story For Child অর্থাৎ ছোটোদের “ভীতু ছাগলছানা” গল্পটি পরে কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরও Bangla Golpo পড়ার জন্য আমাদের ব্লগটিকে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।

1 thought on “Bangla Story For Child | ভীতু ছাগলছানা | Bengali Moral Story”

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now