WhatsApp Channel
Follow Now
Telegram Group
Follow Now
Last updated on August 18th, 2023 at 03:45 pm
Premer Golpo In Bengali – রোমান্টিক প্রেম
আজকের bangla valobashar golpo টির নাম – “Prem” গল্পের প্রধান চরিত্রে – রতন ও মালা, বিষয় – অফুরন্ত ভালোবাসা, bangla love story অথবা Bengali shayari পাওয়ার জন্য! আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করিয়া জানাইতে ভুলিবেন না।
আজকের গল্প – প্রেম
মালার কোলে মুখ গুঁজে ছিলাে রতন, সে হঠাৎ উঠে বসলাে, বললাে-চলাে, বাইরে যাবাে, চলাে।
একটু চমকে গিয়েছিলাে মালা, স্থির হয়ে অবিন্যস্ত শাড়িটা সামলাতে সামলাতে সে-ও উঠে বসলাে।
এখন মাঝরাত, জানালা-দরজায় কপাট, তবে নিঃশব্দ থাকলে বন্ধ দরজা-জানালার ফাক গলে নানারকম পরিচিত-অপরিচিত শব্দ কানে এসে পৌছয়।
খােলা চুলে খোঁপা বেঁধে নিয়ে হাঁটুতে মুখ ঠেকালাে মালা, মৃদু হাসলাে সে বাইরে যাবে, এই রাতে।
রতনের নানা বাতিক, সে জানে।
তবে রতন এখন স্থির – যাবো।
কাল তাে চলে যাচ্ছি-সে বললো, আজ জ্যোৎস্না, চলােএখন ঘুরে আসি, বেশিদূর যাবাে না, নদী পাড় পর্যন্ত। হাঁটুতে মুখ ঠেকিয়ে রতনের দিকে তাকিয়ে সামান্য ক্ষণ ভাবলাে মালা, তার আপত্তি নেই, সে বললাে-চলাে, আমি, রাজি। আপত্তি থাকলেও শুনতাম না-রতন বলে এবং বিছানা ছেড়ে নামে। বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারের ঘরবাড়ি। প্রায় সব লাগােয়া ঘর, কিছু আছে খুব অল্প দুরে-দুরে। রতন খুব সন্তর্পণে দরজার খিল খােলে, এই মাঝরাতে মৃদু কোনাে আওয়াজও জোরালো শােনাবে। দরজা খুঁলে মালাকে হাত ধরে বাইরে এনে দরজা সে আলগােছে ভেজিয়ে দেয়। সারবাঁধা পরপর কয়েকটি ঘর।
এপাশে বাড়ির অল্পবয়সীরা, তাই কিছুটা স্বস্তি। মুরুব্বীরা একটু দূরে-দূরে ওদিকে থাকতে ভালােবাসে।
রতন দরজা ভেজিয়ে প্রথমেই এদিকে ওদিক দেখে নিলাে, দাওয়ায় ঘুমিয়ে ছিলাে দুটো কুকুর, তারা এই মৃদু শব্দেই উঠে দাঁড়িয়েছিলাে, তবে তারা এই এক সপ্তাহে এ-দু’জনকে চিনে ফেলেছে, সামান্য লেজ নেড়ে তারা তাই আবার মাটিতে শরীর মুখ ঢাকলাে।
রতন হাত ধরলাে মালার-দেখেছাে, বলিনি আজ জ্যোৎস্না, চলাে-আজ পাগল হয়ে যাবাে।
মৃদু হাসে মালা ‘বাকি নেই…কিন্তু একটা ব্যাপার, ধরাে যদি জীন বা পরী ভর করে? ‘তবে ব্যাপারটা আগে থেকেই ঠিক করে নিচ্ছ, তুমি পরি আমি জীন রতন বললাে, বলে তারা এগােলাে। মালার মৃদু হাসির শব্দই বেশ বেজে ছিলাে, তারা টের পায়নি।
তপনের ঘর পেরােনাের আগে সে ঘরের ভেতর থেকে তপন বলে, ‘কে যায়?’ একটু চমকেছিলাে বটে রতন, তবে মুহূর্তের মধ্যে সে সামলে নিলাে,চুপ শালা, আমি যাই। তুই চুড়ি পরা ধরলি কবে?
তপনের গলার সঙ্গে তার বউয়ের মৃদু হাসিও ভেসে আসে। রতনের রিফ্লেক্স কম নয়, সে বলে’তবে ধরে নে, চুড়ি যে পরে সেও আছে সঙ্গে। রতনের পাশে দাঁড়িয়ে মালা শাড়ির আঁচলে হাসি সামলায়।
তা রতনবাবু, যাওয়াটা হচ্ছে কাথায় এতাে রাতে?
বাইরে।
সে তাে বুঝতেই পারছি। বাইরে কোথায়?
নদী পাড় পর্যন্ত।
নদী! দড়ি-কলসি নিয়েছিস সঙ্গে?
না না, তা কেন রতন সবেগে মাথা নেড়ে উত্তর দিতে দেরি করলাে না-বরং আমি ভাবছি নদীপাড়ে মালাকে দাঁড় করিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আমি বলবাে,তুমি হও গভীর গাঙ আমি ডুইব্যা মরি। তপন সমবয়সী চাচাতাে ভাই। ওর সঙ্গে একটু ইয়ার্কি খুব সহজেই চলে।তপন বললাে-বেশ।
তােরা যাবি?
তপনের ঘরে আড়মােড়া ভেঙে হাই তােলার মৃদু শব্দ হয়, সে বলে-নারে, পােষাবে না। এসব ব্যাপারস্যাপার নতুনদেরই মানায়, আমাদের প্রায় দুবছর হতে চললাে তবে বেশিদুর যাসনে। যাবাে না-বলে মালার হাত ধরে বাকি ঘরগুলাে পেরােয় রতন। আর কেউ জেগে নেই। ওদিকে একবার কাসির শব্দ শােনা গিয়েছিলাে, তবে সে বােধহয় ঘুমের ভেতর। তারা নির্বিঘ্নে ঘরগুলাে পেরিয়ে দাওয়ায় নামলাে। আজ জোর জ্যোস্না। চারিদিক সদ্য ধােয়া আয়নার মতাে কিছুটা ফাঁপা কিছুটা পরিস্কার। বাতাসও আছে খুব।
সে বাতাসের রােখ টের পাওয়া যায় না এই প্রায় আবদ্ধ জায়গায় দাঁড়িয়ে, কিন্তু সে একটানা বইছে। বাড়ির বাইরে সামনে দক্ষিণের বাগানে তার উপস্থিতি তারা দাওয়ায় নেমে চারপাসে আরেক বার তাকায়। বাড়ির সীমানা পেরােনাের আগেই কুকুর দুটো উঠে দাঁড়ায়, তাদের পেছনে-পেছনে আসে মৃদু পায়। তা আসুক, সে কোনাে ব্যাপার নয়, বরং পাহারাদার রইল দু’জন। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে এসে তারা গলা খুলে হাসে। দু’জন দুজনের দিকে ফিরে থামাে থামাে, কেউ জেগে উঠবে। তাদের চাপা হাসি ফুরােয় না, এগােতে এগােতে বারকয়েক পেছনে ফেরে, কেউ দেখলাে কি-না।
দেখলে অসুবিধের কিছু নেই, তাদের নিছক কৌতূহল। বড়জোর মুরুব্বীদের মৃদু ধমক শুনতে হবে, কিংবা সমবয়সীদের খুচরাে ইয়ার্কি।
এই পুরাে এলাকায় ভয়ের কোনাে কারণ নেই।
বড় শাস্ত গ্রাম, গণ্ডগােল পাকানাের মতাে সাহসী যে দু’চারজন, তারা এ-বাড়ির বাঁধা লােক। তাছাড়া নদীপাড় বাড়ি থেকে সামান্য সময়ের পথ।
পথে আরাে দু’-চার ঘর পড়বে, সেসব ঘরে যারা থাকে তারা এ-বাড়িরই কামলা বা ঐ জাতীয় কিছু।
তারা তাই হাত ধরাধরি করে নির্ভয়ে এগােয়।
কুকুর দুটো মাটি শুকতে শুকতে পেছনে তাে আসছেই। ইট-বিছানাে আধ-পাকা রাস্তা কিছুদুর এগিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেছে। তারা সে রাস্তা ছেড়ে মেঠো পথে নামলাে। এখান থেকে নদী দেখা যায়, সে নদী বড় নয়, শাখা নদী। নদীর দক্ষিণে অল্প দূরে দক্ষিণ-পূবে বড় বাড়ির নিজস্ব বাগান বিশাল এলাকা জুড়ে।
সাফ-সুতরাে এলাকা-ভীতিপ্রদ কিছু উঠে আসবে না ও অঞ্চল থেকে। তারা দু’জন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে দু’পাশের কামলা-মজুরদের দু-চার ঘর পেরিয়ে নদীর কাছে। এসে পৌছালাে।
রতন এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে মালার মুখ উঁচু করে ধরলো-এখনত বে তােমাকে একটু আদর করি।
আরও পড়ুনঃ একটি অন্ধকার রাত্রি
ঘরে এতােক্ষণ কি করছিলে- মালা ঠোট টিপে হাসে। রতন সে কথায় জবাব না দিয়ে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলে মালা বললাে-আজ জ্যোৎস্না দেখেছে?
সে জন্যেই বাইরে এলাম’রতন হাসি চেপে রেখে গম্ভীর গলায় বলে ‘আমি জানালার ফাক দিয়েই টের পাচ্ছিলাম কি-না, ঘরের ভেতরও আলাে হয়েছিলাে। আজ যেন জ্যোৎস্নার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইছে বাতাশ। আগে বাড়ির বন্ধ জায়গায় দাড়িয়ে টের পাওয়া যায়নি, এখন চারপাশে বাতাসের খুব বিক্রম। খােলা জায়গা পেয়ে সে এখন হু-হ্ করে ছুটে আসে। যেন খুব সহজে ইচ্ছে করলেই সে ভেঙ্গে দিতে পারে, উড়িয়ে নিতে পারে অনেক কিছু। তারা নদীর ধারে বসলাে। ঢালু এলাকা, দশ হাত সামনে নদীর পানি জ্যোৎস্নার আলােয় জুলজুল। নদীও খুব খেলায় মত্ত বাতাস এবং চাদের আলাের সঙ্গে। বাতাসের সঙ্গে নেমে এসে চাদের আলাে কখনাে দু’ভাগ করে দেয় নদীর পানি, কখনাে চকচকে। পাড়ে বসে মালা বললাে-ঠাণ্ডা লাগছে, ঘরে কিছুই টের পাইনি।
রতন তার ধার ঘেঁষে আসে তবে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো শীত কমবে। হাত বাড়ালেই আওতার মধ্যে নানা আকারের ঘাস, তার কিছু মালা ছিড়ে, বসে-হুম, নিজেই কাঁপছাে বাতাসে। রতন তখনই উত্তর দিলাে-‘তবে আমিও তােমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি, দু’জন দুজনকে। এদিক দক্ষিণের বাগানের আর চারপাশে বাতাসের এবং এই সামনে শাখা নদীর নিজস্ব শব্দ ছাড়া আর কানাে শব্দ নেই। মনে হয় আর কেউ কোথাও জেগে নেই। প্রথম-প্রথম একটু আড়ষ্ট ভাব ছিলাে, সেটুকু কাটিয়ে উঠে তারা এখন অনেক সহজ। বাতাসের খুব হুজ্কার বটে, চাদের আলাে এতাে হাজার মাইল পেরিয়েও কি প্রচুর, আর দশ হাত দূরে নদীর পানি নিথর নয়, সে ভাঙছে বাতাসে, চাদের আলাের সঙ্গে মিলে-মিশে যাচ্ছে।
কিন্তু এসব কোনাে বাধা নয়। তারা সহজেই দুজন দু’জনকে যতােদূর সম্ভব কাছে টেনে নেয়। মালা বলে আজ রাতে না-বেরােলে মিস করতাম। : কি করতে? মিস করতাম, এইসব কিছু। ঘরে বসে কখনাে মনে হয়নি বাইরে মাঝরাত এতাে সুন্দর বুদ্ধিটা আমার, সুতরাং আমার কিছু প্রাপ্য রয়েছে তােমার কাছে।
ধন্যবাদ।
উমম, ধন্যবাদ না, আদর। এমন আদরখেকো ছেলে আর দেখিনি’-মালা রতনের চুল ধরে ঢানে।
কটা ছেলেকে আদর করেছেন?’ রতন হাসে।
মালার রিফ্লেক্স রতনের সমান, তার যেন উত্তর তৈরি হয়েই ছিলাে ‘তা বেশ কিছু তাে হবেইপিন্টু, বাবু, শেমীম, জামি-একটাও আমার পিছু ছাড়ে? মামী, খালামণি, হাে হাে করে অনেকক্ষণ হাসে রতন।
সে হাসি খুব জমকালাে শােনায়, কিন্তু পরমুহূর্তে মিশে যায় বাতাসের সঙ্গে, তখন মনে হয় না প্রাণ খুলে হেসেছিলাে কেউ। মুহূর্তের মধ্যে হাসির শব্দ ছাপিয়ে বাতাসের টান, চমকেছিলাে বটে রতন।
তবে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মৃদু হাসে, মালার চুলে মুখ রাখে তােমার চুলগুলাে- আমার আর কি সুন্দর?’
মালা খুব আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে। ভারি সুন্দর।
রতনের ভ্রু কুচকে গেলাে সামান্য-আগে বলিনি। বলাে-মালা মাথা কাত করেআমি শুনি। আচ্ছা, বলছি দাঁড়াও-একটুক্ষণ ভাবলাে রতন-ঠিক আছে, তােমার পুরাে শরীরটার কথাই ধরাে, সামনে নদীর, জল আর চাদের আলাে, তােমার শরীর কি অমন স্বচ্ছ, মনােহর এবং উজ্জ্বল নয়?
বুঝিলাম’মালা হাসে। আর দক্ষিণের বাগানে আছে যে বেতঝােপ, তুমি কি কখনাে-কখনাে ঐ বেতের মতাে নমনীয় অথচ অভঙ্গুর নও? এই নদী যেভাবে গ্রহণ করছে বাতাস এবং চাদের আলাে, নির্বিঘ্নে এবং নানাভাবে, তুমি কি সেভাবে গ্রহণ করাে না আমাকে?
মালা সবেগে মাথা নাড়লােএ্যাই ছেলে, এসব আমার রূপের বর্ণনা হচ্ছে?
রূপের বর্ণনা-রতন একটু মাথা চুলকায়-আসলে, ওসব তাে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে বহুবার বলেছি,-সে একটু এদিক-ওদিক করে, তারপর আলতাে হাতে মালার মুখ ফেরায়দক্ষিণের বনে, ঐ দ্যাখাে সুপারী গাছ, ওর মাথায় পড়েছে চাদের আলাে, কী আলাে ঠিকরে বেরুচ্ছে, অন্ধকার ঘরে তােমার বুক থেকে ও-রকম আলাে কি ঠিকরে
বেরােয় না?
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ তিলোত্তমা
বেরােয়’মালা খুব স্বচ্ছন্দে মাথা নাড়ে, বলে-‘বাব্বা, পারােও বটে।
‘কিন্তু আর পারছি না ; না না স্টক শেষ নয়, কিন্তু মেলাতে পারছি না-রতন মাথা চুলকায়-‘তুমি একটু বলাে দেখি, শুনি।
‘আমি বলবাে?
বলাে, তুমি বলাে এবার আমি শুনি। রতনের শরীরের ওপর নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে মালা চারপাশে একবার তাকায়, রতনের লম্বা চুল টেনে আঙুলে জড়ায়, বলে-বাতাস ক্ৰমশঃই বেড়ে যাচ্ছে, টের পাচ্ছ?
বাতাস বাড়ছে, রাত একটু-একটু করে গভীর হলে বাতাস ক্রমশ বাড়ছে। শূন্য প্রান্তরে বহমান সে, তাকে কে থামায়, কখনাে হা-হা করে ছুটে আসে সে, যেন তােলপাড় করে ছােটে। রতন মাথা দোলায়-‘হ্যা, টের পাচ্ছি। ‘তবে শােনাে, তুমি কি ঐ বাতাসের মতাে কখনাে কখনাে তুমুল নও?
‘হ্যা, তা বটে, হয়তাে তাই।
বাতাস হঠাৎ থেমে গেলে নদীর পানি কী নিথর দ্যাখাে, প্রয়ােজন মতাে তুমিও তাে ও-রকম স্থির এবং একাগ্র। আচ্ছা, তারপর?
তারপর, তাহলে তারপর ঐ দক্ষিণের বাগানে তাকাও, সুপারীর সারি থেকে পছন্দমতাে’ যে-কোনাে একটাকে বেছে নাও, তুমি কি অমনি একটা গাছের মতাে সতেজ, সরল এবং কর্কশ নও? কিছু না, কিছু না, তুমি একটু ব্লুট। ইঁ, জানাে, আমি না মনে-মনে ঠিক তােমার মতাে পুরুষ চাইতাম।
কি রকম?
কি রকম?’ মালা মাথা দুলিয়ে হাসলাে– ‘তুমি যেরকম সেরকম, প্রয়ােজনমতাে স্থির-ঋজু, আবার আদরের সময় একদম জংলী, জানাে, তুমি না একটা জংলী।
আর তুমি’-রতন নড়ে-চড়ে ওঠে-‘তুমিও তাে বুনাে, বশ মানতে চাও না।
তাই-ই, জানিই তাে-মালা হাসে। ‘আসাে দেখি কে কতােটুকু জানে’রতন সােজাসুজি মালার দিকে তাকায় এবং পরমুহর্তে তারা প্রায় পাগল হয়ে যায়।
কেউ দেখবে না তাে?’-রতনের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে মালা বলে-না না, ওরা দেখুক। কুকুর দু’টো কিছুদুরে পা ভেঙে শুয়ে ছিলাে। ওদের মন পাগলের মতাে নড়েচড়ে উঠতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। সামান্য সময়ের জন্যে তারা আবার পা ভেঙে শুয়ে পড়ে।
তাদের দু’জনের আর কিছু খেয়াল থাকে না। তারা পরস্পরকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রাখে। কাছে টানে। একটু ঢালু জায়গা, তবে পিছলে নেমে যাওয়ার ভয় নেই। মালা রতনেরা চুল আঁকড়ে ধরে হাসে’আবার বলছি,তুমি একটা ব্রুট, জংলী, জানােয়ার। রতন মালার শাড়ির আঁচল সরায় অভ্যস্ত হাতে, ব্লাউজের বােতামে হাত রেখে বলে দেখাচ্ছি, দেখাচ্ছি দাঁড়াও। কিছু জংলী কাজ কারবার দেখাচ্ছি। শরীরটা ফাসে। সম্পূর্ণ খুলে সেটা বাতাসে পতাকার মতাে উড়িয়ে দেয় রতন, বলে তুমিও একটু বুনাে পুরাে জংলী। ব্রা’র হুক নিজে হাতে খুললাে মালা-তাই? বশ মানাও তুমি, কে বারণ করছে। রতন তখনই দাঁত বসালাে মানাচ্ছি। এ্যাই জানােয়ার, তাই বলে এভাবে’-মালার শরীর মুচড়ে ওঠে। নিজের অপ্রয়াে-জনীয় পােশাক খুলে ফেলতেও তার বিন্দুমাত্র দেরি হলাে না।
সে মালার কান মৃদু কামড়ে ধরে বললাে-দেখি তাে বুনাে, তুমি বশ মানো কি-না। সে কথায় মালার শরীর ফুঁসে উঠলাে, সে বললাে দ্যাখাে। মালা নদীর দিকে তাকায় না, সে বলে-বাদ দাও, তুমি শােনাে। রতন শােনে না। সে হাঁটু গেড়ে বসেছে। জ্যোৎস্নার আলােয় তাকে পাথরের মুর্তি মনে হয়, সে হাসেআমি তাে আমার ইচ্ছে মতাে স্থির ও একাগ্র। মালার দিকে তাকায়, সে বলেতুমি অমন কাঁপছাে ক্যানাে, কাঁপছাে না-কি, না-কি ফুঁসে উঠছাে নদীর জলে বাতাসের টানের মতাে, দ্যাখাে। মালা দ্যাখেনা, সে মাথা নাড়ে, হাত নিজেই দ্যাখাে অমন আলাে ঠিকরে বেরুচ্ছে কি-না। মালা আবার হাত বাড়ায়, রতন সরে গেলে সে জেদী গলায় বলেওসব শুনতে চাই-না, তুমি ভালাে করছাে না, তুমি শােনাে। কিন্তু তার বাড়ানাে হাত এড়িয়ে রতন বার-বার সরে গেলে সে হাল ছেড়ে দিলাে। রতন জোর গলায় হাসে, সে মালার বুকের ওপর ঝুকে পড়তে গেলে মালা দ্রত সরে গেলাে, মালা যেন প্রস্তুত হয়েই ছিলাে, বললাে-একটু আগেও তুমি ছিলে হঠাৎ থেমে যায় বাতাসের মতাে স্থির একাগ্র, এখন মতিভ্রম হলাে ক্যানাে?
‘মতিভ্ৰম’! রতন হাসে।
তাে কি’মালাও হাসলাে-হঠাৎ অমন জেদি বাতাসের মতাে ঝাপিয়ে পড়তে নিলে যে!
তুমি বুঝি তা চাচ্ছ না?
আরও পড়ুনঃ Bangla Jokes
চাচ্ছি না-কি, কে জানে? মালা খুব সহজ গলায় বলে রতনের দ্বিতীয় আক্রমণ ঠেকানাের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু রতন এবার খুব সতর্ক এবং দ্রুত। মালা ফাক গলে-বেরিয়ে যেতে পারলাে না। তবে ধরা পড়ে সে বিন্দুমাত্র মনঃক্ষুন্ন নয়, রতনের কাধের একপাশ দাঁত বসিয়ে নিশ্চিন্তে সে বলে-হ্যা, এখন তুমি যে-কোনাে বৃক্ষের মতাে সতেজ, এবং সবল এবং কর্কশও বৈকি।
তারা পরমুহূর্তে আবার পাগল হয়ে উঠলাে। দু’জন-দুজনকে কী আক্রোশে ধরে রাখলাে। যেন ভেঙে-চুরে দেবে, কিন্তু হাত ছাড়া করবে না। ঢালু জায়গায় তারা ইচ্ছে মতাে গড়িয়ে যায় এদিক-ওদিক। দু’জনের দ্রত শ্বাস এবং চিতকার ধ্বনি অবিরাম বাজে এবং পরমুহূর্তে বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। রতনের গলার আওয়াজ ফ্যাশফ্যাশে, সে বারাবার বলে মেরে ফেলবাে, আজ আমি তােমাকে মেরে ফেলবাে।
মালা কিছুই বলে না, কিন্তু তার দ্বিগুণ বিক্রম, সে দাঁত-নখ সমানে চালায়। তার কণ্ঠের অস্ফুট ধ্বনির সঙ্গে প্রচুর আনন্দ-উত্তেজনা মিশে থাকে। শরীরের নিচে শুকনাে মাটি ভেঙে-চুরে যায়, ঘাস লেপ্টে যায় মাটির সঙ্গে। তারা দু’জন এমন জেদী এবং তেজী-তীব্র হয়ে ওঠে যেন পৃথিবীর যে-কোনাে বাধা মুহূর্তেতের মধ্যে গুড়িয়ে যাবে তাদের ক্রোধের সামনে। তাদের প্রস্তুতিপর্ব দীর্ঘ সময় নিলাে। রতন আদিম বুনাে ঘােড়ার মতাে করে তােলে মালাকে এবং সে নিজে স্থির একাগ্র ও কর্কশ থেকে সে ঘােড়াকে বশ মানানাের সমস্ত কৌশল এবং শক্তি সঞ্চিত রাখে শরীরে। মালার অস্ফুট ধ্বনি ক্রমশ অবিরাম ও জোরালো হলে রতন উদ্যত হলাে হারামজাদী, তােকে কিন্তু মেরে ফেললাম, এই এখন। কিন্তু ঠিক সে সময়ে তার নজর গলাে দক্ষিণের বাগানে। সে বােধ হয় নিছক কৌতুহলে কিংবা সংস্কারে চোখ তুলে তাকিয়েছিলাে, অথবা ঢালু জায়গায় ভারসাম্য
হারিয়ে তার চোখ চলে গিয়েছিলাে ওদিকে।
এ-রকম তাে আগেও বারকয়েক এদিক-ওদিক চোখ গ্যাছে তার, কিন্তু এই মুহূর্তে বাগান তাকে চমকে দিলাে। তারা দু’জনে কেউ টের পায়নি, এই ফাকে বাতাস বেড়েছে ঢের। মালারা শরীর থেকে সামান্য তুলেছে মুখ, এই সময়ে প্রচণ্ড বাতাস যেন তাকে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেলাে। সে অবাক হয়ে দ্যাখে দক্ষিণের বাগানে বৃক্ষের সারি, তার সবগুলাের ওপর ক্লদ্ধ প্রবল বাতাস তার বিশাল শরীর নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে, এলােমেলাে করে দিচ্ছে, তােলপাড় করে তুলছে চারদিকে। গাছগুলো নুয়ে পড়ছে বটে কখনাে-কখনো কিন্তু আবার কী অবলীলার সেই প্রবল বাতাসকে শরীর গ্রহণ করে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।
দুপক্ষের কি ভীষণ ক্রোধ এবং প্রতাপ এবং তারা ঠিক-ঠিক জায়গা মতাে এসে পরস্পরকে কী সহজে গ্রহণ করছে! রতন চোখ ফেরাতে পারে না সেই বিশাল দৃশ্য থেকে। সে টের পেলাে তার ঋজু এবং দৃঢ় শরীর একটু শিথিল হয়ে এলাে। বিস্মিত-হতচকিত সে জোর করে চোখ ফিরিয়ে এনে মালার মুখের দিকে তাকাতে গেলে তার চোখ গেল নদীর দিকে।
সে দেখলাে বাতাস প্রচণ্ড নেমে আসছে সেখানেও। নদীর জলকে হালকা বিক্রমে কী সহজেই চিরে দু’ভাগ করে দিচ্ছে। রতনের শরীর আরেকটু নুয়ে পড়ে। মালা সহজেই টের পায় তার শরীরের ওপর রতন ক্রমশঃই ভেঙে পড়ছে। সে রতনের ঘাের-লাগা চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পায়-‘কি হলাে, কি হলাে তােমার? মাথা নাড়লাে রতন, মৃদু হাসলাে, বললাে-দ্যাখাে। সে আঙুল তুলে ধরে দক্ষিণের বাগানে পরমুহূর্তে নদীর জলে। মালা তাকায়।
দক্ষিণের বাগান থেকে সে চোখ ফেরাতে পারে না। চাদের আলাে বাতাসের সঙ্গে মিশে নেমে এসেছে সুপারী গাছের মাথায়, তার কী দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
তারপর নদীর জলের দিকে তাকালে টের পায় রতনের মতাে তার সমস্ত শরীরও ক্ৰমশ শ্লথ হয়ে আসছে।
সে দেখলাে কী বিক্রমে নামছে বটে বাতাস, কিন্তু স্বচ্ছ, মনােহর, উজ্জ্বল নদীর জল। মুহূর্তের মধ্যে চির দু’ভাগ হলেও ফুসে উঠেছে প্রতিমুহূর্তে, যেন বাতাসকে সেও দেখে নেবে। আর কি আশ্চর্য, সে শুনলাে নদী গােঙাচ্ছে, কিন্তু সে গােঙানি আনন্দ ও উত্তেজনার।
সে আওয়াজ ক্রমশঃই বেড়ে যায়, কানে তালা লাগে। মালার টান-টান শরীর ক্রমশই শিথিল হয়ে আসে, সে তীব্র এবং তেজী থাকতে পারে না। মৃদু স্লান হেসে তার ছড়ানাে-ছিটানাে পােশাক হাত বাড়িয়ে এদিক-ওদিক থেকে তুলে নেয় রতন, মালার দিকে এগিয়ে দেয়। নিজের পােশাক ঠিক করে নেয় সে, কোনাে দিকে না তাকিয়ে কি এক লজ্জায় চাপা গলায় বলে চলাে, ঘরে যাবাে ঘরে।
(সমাপ্ত)
Superb story.Can I use your stories as a audio story on my youtube channel?…… Plz reply
Hello, You Definitely Use This Story For Your Youtube Video in One Condition, Give The Credit Link To Our Article