Heart Touching Short Love Story in Bengali | বাংলা লাভ স্টোরি

WhatsApp Channel Follow Now
Telegram Group Follow Now

Last updated on August 18th, 2023 at 03:39 pm

Rate this post

আজকের Bangla Love Story টির নাম -“তিলোত্তমা” গল্পের প্রধান চরিত্রে – গোকুল ও তিলোত্তমা, বিষয় – অফুরন্ত প্রেম ভালোবাসা, love story Golpo এবং Love Story Bangla Bengali Shayari এবং ভালোবাসার গল্প আরও পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।




Bangla love story-bengali love story-valobashar golpo-bhalobasar golpo

Heart Touching Love Story in Bengali Language

আজকের গল্প – তিলোত্তমা 

সকলের জীবনেই মাঝে মাঝে এমন একটি নাটকীয় মুহূর্ত আসিয়া উপস্থিত হয় যে, সমস্ত হিসাব, সমস্ত আয়োজন হঠাৎ নিমেষে বদলাইয়া যায়। উত্তরবাহিনী নদিস্রোত সহসা দক্ষিণী বাহিনী হইয়া পড়ে, তুঙ্গ পর্বত অকস্মাৎ গভীর গহ্বরে পরিণত হয়। সাধারণ মানুষের জীবনেই এইসব হয়। ইহার জন্য রাম বা রাবন হওয়ার প্রয়োজন নাই। নকুল নন্দী সাধারণ লোক, তার পুত্র গোকুলও অসাধারণ কিছু নহে। আর পাঁচজনের মতো সেও বি. এ. পাশ করিয়া ওখানে আড্ডা দিয়া, তাস খেলিয়া, শখের থিয়েটারে অভিনয় করিয়া রাজনীতি অথবা সাহিত্য সম্পর্কে মাথা ঘামায় অৰ্থাৎ এককথায় ভ্যারেন্ডা ভাজিয়া দিন যাপন করিতেছিল। আর পাঁচজনের যেমন বিবাহের সম্বন্ধ আসে, গোকুলের তেমনই আসিতে লাগিল।

 বিবাহের বাজারে গোকুল সুপাত্র। শহরের উপর একখানি ত্রিতল বাড়ি, পিতার তেজারতির ব্যাবসা, মাতুলের বিষয় সম্পত্তি যাহা আছে, তাহাতে কোনকালে গোকুলকে উদরাণ্যের জন্য চাকুরীর উপর নির্ভর করিতে হইবে না। ভগবান তাহাকে যাহা দিয়াছেন তাহাতে স্বাচ্ছন্দে সে সারাজীবন শখের থিয়েটার রিজিয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া নাট্য শিল্পের উৎকর্ষ বিধান করিতে পারে। বিবাহের সম্বন্ধ আসিতে লাগিল। পিতা নকুল নন্দী অভিজ্ঞ লোক। কুষ্ঠী, বংশ, পাত্রীর রূপ, পনের পরিমাণ সমস্ত দিক বিচার করিয়া নন্দী মহাশয় যে পাত্রীটিকে মনোনীত করিলেন, তাহার ডাক নাম তিলু, ভাল নাম তিলোত্তমা। নন্দী মহাশয় সেকেলে লোক, সুতরাং পুত্রকে না পাঠাইয়া নিজেই কন্যাকে দেখিতে গেলেন এবং পছন্দ করিয়া আসিলেন। নাম শুনিয়া গোকুল মুগ্ধ হইয়া গেল। মনে মনে সে যে ছবিটি আকিতে লাগিল, কাব্যের তিলোত্তমা তাহার কাছে কিছু নয়।


শুভদৃষ্টির সময় সে ঘাবরাইয়া গেল। তিলোত্তমাই বটে। তিলের মতোই কুচকুচে কালো এবং গোল। ছোট ছোট চোখে ভীরু শংকিত দৃষ্টি। উলুধ্বনি, সংখধনী, কোলাহলধ্বনি, পরিবেশনধ্বনি, না না রূপ ধ্বনির মধ্যে ইহারই পানিপীরণ তাহাকে করিতে হইল। উপায় নাই, কিন্তু ঘাবরাইয়া গেল। পিতা নকুল নন্দিও ঘাবরাইয়া গেলেন। তিনি বেহাইটিকে যেরূপ সোজা লোক মনে করিয়াছিলেন, দেখিলেন আসলে তিনি মোটেই সেইরূপ সোজা নহেন। লোকটা হাত কচলাইয়া ক্রমাগত হে-হে-হে-হে- করিয়া চলিয়াছে, অথচ একটিও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে নাই। নগদ পাঁচশত টাকা পন কম দিয়াছে, বলিতেছে, এখন সব জুটাইতে পারা গেল না, বাকি টাকা পরে পরিশোধ করিয়া দিব। দান পত্র দিয়াছে, অত্যন্ত খেলো। 

চেলির রং উঠিয়া যাইতেছে। রিস্ট ওয়াচ নাই- কলিকাতায় নাকি অর্ডার দেওয়া হইয়াছে, এখনও আসিয়া পৌঁছায় নাই। আংটিটা সোনার কিনা কে জানে- দেখিতে তো পিতলের মতো। তিনি শেষে একটা ধরিবাজের সহিতই কুটুম্বিতা করিয়া বসিলেন নাকি? তখন তিনি যাহা যাহা দাবি করিয়াছিলেন- লোকটা তাহাতেই রাজি হইয়া হাত কচলাইতে কচলাইতে ঘাড় নাড়িয়া ছিল। দাবি অবশ্য তিনি একটু বেশিই করিয়াছিলেন, কিন্তু বেশি টাকা না পাইলে ওই কুচ্ছিত হাদামুখো মেটো মেয়েকে পুত্রবধূ রূপে বরণ করিয়া লইবেনই বা কেন তিনি? সব জিনিসের একটা হিসাব আছে তো! কিন্তু একি কান্ড? ওই অতিবিনয়ী লোকটার নিকট এ ব্যাবহার কে প্রত্যাশা করিয়াছিল। বাড়িতেও গাল খাইতে হইল। গোকুলের মা উচ্চকণ্ঠে এই কথাই বার বার বিঘোষিত করিতে লাগিলেন যে নকুলের ভীমরতি ধরিয়াছে। তাহা না হইলে কেহ সজ্ঞানে নিজ পুত্রের জন্য ওই পেত্নীকে বউ করিয়া আনিতে পারে? ছি ছি ছি ছি! নকুল মিথ্যা কথা বলিয়াই রেহাই পাইলেন- ও মেয়ে আমায় দেখায়নি, আমি যে মেয়ে দেখেছিলাম, তার টকটকে রঙ, একপিঠ চুল, দিব্যি চোখমুখ, গোলগাল গড়ন। চোর- চোর, জোচ্চোর, ধরিবাজ ব্যাটা। ছেলের আমি আবার বিয়ে দেব। সকলেই ইহাতে সায় দিল। এমনকি গোকুল পর্যন্ত।



তিলোত্তমার সহিত আলাপ হইলো বইকি। একটা জিনিস গোকুল লক্ষ না করিয়া পারিল না, তিলু ভারী ভালো মানুষ। মুক্তকেশী বেগুনের মতো মুখখানিতে ভালমানুষি যেন মাখানো। লাজুক ও খুব। অনেক সাধ্য সাধনা করিয়া তাহার সহিত আলাপ করিতে হইয়াছে। আলাপ করিয়া সে অবাক হইয়া গিয়াছে। তাহার বাবাকে সকলে মিলিয়া এত গালাগালি দিলো, তাহাতে তাহার ভ্রূক্ষেপ মাত্র নাই। সকালে সূর্য উঠিলে বা বর্ষা কালে বৃষ্টি নামিলে সে বিস্মিত বা বিচলিত হয়না। এ ব্যাপারেই হইল না। বিবাহের ব্যাপারে এসব হইয়া থাকে, ইহাতে আশ্চর্য বা দুঃখিত হইবার কিছু নাই। নকুল নন্দী তাহার সম্পর্কে যে মিথ্যাভাষণ করিয়াছিলেন, ইচ্ছা করিলে সে তাহার প্রতিবাদ করিতে পারিত। কিন্তু সে করিল না। সসঙ্কোচে চুপ করিয়া রহিল। গোকুলকে স্বামী রূপে পাইয়া সে কৃতার্থ হইয়া গিয়াছে, অকারণ বাদ-প্রতিবাদে প্রয়োজন কি? সে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করিতেছে, সে গোকুলের অনুপযুক্ত। অনধিকারী হইয়াও সে ভাগ্যবলে সুখস্বর্গে প্রবেশ করিয়াছে। 

কলহ-কোলাহল ভুলিয়া এ আনন্দলোক হইতে নির্বাসিত হইতে সে চায় না। গোকুল বলিল, বাবা-মা বলছেন, আমার বিয়ে দেবেন। তিলু চুপ করিয়া রহিল। উত্তর দিচ্ছ না যে? বেশ তো, হিন্দুর ঘরে হয় তো অমন। তোমার কষ্ট হবে না? আমার? না। একটু চুপ করিয়া পুনরায় কহিল, হলেও তোমার যদি তাতে সুখ হয়, সে কষ্ট সহ্য করব। গোকুলের মনে হইল, ইহা অভিমানের কথা। কিছু বলিল না। বছর খানেক কাটিয়া গেল। তিলুর সমন্ধে মোহ-মুক্তি হইবার পক্ষে এক বৎসর যথেষ্ট সময়। না জানে লেখাপড়া না জানে গান বাজনা, না জানে হাবভাব। না আছে রূপ না আছে গুন। গুনের মধ্যে মহিষের মতো খাটিতে পারে। কারি কারি বাসন মাজিয়া চলিয়াছে। রাশি রাশি কাপড় কাঁচিয়া চলিয়াছে, ভ্রূক্ষেপ নাই। মা তাহাকে রান্না ঘরে ঢুকিতে দেন না। সে বাহিরের কাজ কর্ম লইয়া থাকে, এবং তাহাতে ডুবিয়া থাকে। আকাশে চাঁদ উঠিল কিনা, বকুল বনে পাপিয়া ডাকিলো কিনা, এ সবের খোঁজ রাখা তাহার সাধ্যাতীত। নাট্যশিল্পী কবি প্রকৃতির গোকুল দমিয়া গেল এবং অবশেষে হাল ছাড়িয়া দিল। একটা চাকরানীর সহিত কাহাতক আর প্রেম করা যায়। বাবা যদিও এখনও বেহাই-গুষ্টির উপর চটিয়া আছেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিবাহের কথা তিনি আর উত্থাপন করেন না। স্বতঃ প্রবৃত্ত হইয়া গোকুলের পক্ষেও মুখ ফুটিয়া সে প্রস্তাব করা শক্ত। এমন সময় বিধাতা একদিন মুখ তুলিয়া চাহিলেন। 




চন্দ্রগুপ্ত অভিনয় হইবে। সেকুলাস ও আন্টিগোনাস অভিনয় করিবার লোক পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু পোষাক পাওয়া যাইতেছে না। গ্রীক পোষাক আনিবার জন্য গোকুল কলিকাতায় যাইতেছিল। স্টেশনে টিকিট করিতে গিয়া তাহার চোখ পড়িল, একজন বিধবা প্রৌঢ়া ভিড়ের মধ্যে বড় বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছেন। নিজের পুটুলি ও কাপড়-চোপড় সামলাইয়া তিনি কিছুতেই টিকিট করিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। লোক চতুর্দিকে ধাক্কাধাক্কি করায় তাহাকে কেবল পিছাইয়া দিতেছে। গোকুল তাহাকে সাহায্য করিল। টিকিট কিনিয়া দিল। তিনিও কলিকাতায় যাইতেছেন, তাহার সহিত কোনো পুরুষ অভিবাবক নাই, সুতরাং গোকুলকে সে ভারও লইতে হইল। গোকুলের কামড়াতেই তিনি উঠিলেন, গোকুল নিজের নানারূপ অসুবিধা করিয়া, এমনকি একজন প্যাসেঞ্জারের সহিত কলহ করিয়াও তাহার শয়নের ব্যাবস্থা করিয়া দিল। প্রৌঢ়া মুগ্ধ হইলেন। কামরা ক্রমশ খালি হইয়া গেলে প্রৌঢ়া পুটুলি হইতে পান বাহির করিয়া গোকুলকে একটি দিলেন। নিজেও একটু লইলেন। 

বিশেষ করে নরনারীর চিরন্তন প্রেম যে কি আশ্চর্য জিনিস এ কে না জানে। Love Story Bengali প্রেম নিয়েই বােধহয় পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ বাংলা সাহিত্য রচিত হয়েছে। প্রেমের বৈচিত্র্যও তাে কম নয়। মিলন, বিরহ, পরকীয়া, হিংস্র বা আদিম, দেহগন্ধময়, প্লেটোনিক। দান্তে এক বিয়েবাড়িতে এক কিশােরীকে কয়েক পলক দেখে যে ফিদা হয়ে গিয়েছিলেন সেই কিশােরীর সঙ্গে তাঁর আর দেখা হয়নি, তার নাম বা পরিচয় ও জানতেন না, তবু তাকে নিয়েই Divine Comedy রচনা করে ফেলেছিলেন, যা আজও কালজয়ী হয়ে বেঁচে আছে। বেঁচে আছে কালজয়ী বিয়াত্রিচেও। শরৎবাবুর devdas একরকম, আবার তারই দত্তা অন্যরকম। প্রেমের বৈচিত্র্যই তাকে এমন মহার্ঘ করে তুলেছে। এইসব Love Story in Bengali গল্প দিয়ে আমাদের ব্লগ টি সাজানো আছে।


তাহার পর চকচকে একটি রুপার কৌটা হইতে খানিকটা জর্দাও বাহির করিলেন। গোকুল লইল না, অভ্যাস ছিলনা। প্রৌঢ়া স্মিতমুখে নিজের মুখবিবরে খানিকটা নিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, কপাল যখন পুড়ে গেল, তখন একে একে সবই ছাড়তে হল। এটুকু কিন্তু এখন ছাড়তে পারিনি বাবা। মুচকি হাসিয়া জানালা দিয়া মুখ বাড়াইয়া পিক ফেলিলেন। আলাপ শুরু হইয়া গেল। দীর্ঘ আলাপ হইল। দীর্ঘ আলাপের পরে প্রৌঢ়া গোকুলের নারী নক্ষত্র সমস্ত জানিয়া লইলেন। গোকুলও মন খুলিয়া সমস্ত বলিয়া ফেলিল। কিছুই গোপন করিল না, করিতে পারিল না। এমনকি করিবার প্রয়োজন অনুভব করিল না। অর্থাৎ গোকুলও মুগ্ধ। সব শুনিয়া প্রৌঢ়া বলিলেন, তুমি যে আবার বিয়ে করবে বলছ, পাত্রী ঠিক হয়েছে কোথায়? এখন হয়নি। আর এক খিলি পান এবং আরেকটু জর্দা মুখে দিয়া প্রৌঢ়া বলিলেন, দেখ বাবা, তাহলে সব কথা তোমাকে খুলেই বলি। আমার একটি মেয়ে আছে। ওই মেয়েটি হবার পরেই আমার কপাল পুড়ে গেল। মনের মতো একটি পাত্র খুজছি। 


তুমি তো আমাদের পালটি ঘর, তোমাকে ভারী পছন্দ হয়েছে আমার, আমার মেয়েও কিছু নিন্দের নয়-যদি বল তাহলে- গোকুল ইহা প্রত্যাশা করে নাই। কি বলিবে ভাবিয়া পাইল না। উষাকে আগে দেখো তুমি। তোমার যদি পছন্দ হয় তাহলে- আমতা আমতা করিয়া গোকুল বলিল, আমার স্ত্রী বর্তমান আছে, সে কথা জানবার পর আপনার মেয়ে হয়তো আপত্তি করতে পারেন। আমার কথার ওপর কথা কইবে উষা? তেমন মেয়ে সে নয়। তাকে লেখাপড়া, গানবাজনা সবই শিখিয়েছি। কিন্তু আজকাল মেয়েদের মত অবাধ্য তাকে হতে দেইনি। আর একটা স্ত্রী থাকলেই বা! তাছাড়া তুমি যখন আবার বিয়ে করতে যাচ্ছো, তখন সে স্ত্রীকে তুমি ত্যাগই করবে ঠিক করেছ নিশ্চয়- কি বল? তা তো ঠিকই। তাহলে সে স্ত্রী থাকলেই বা কি, আর না থাকলেই বা কি- কি বল? তা তো ঠিকই। 
উষা উষা নয়- দ্বিপ্রহর। প্রখর রৌদ্র-কিরণের প্রদীপ্ত স্বর্ণকান্তি তাহার সর্বাঙ্গে ঝলমল করিতেছে। চোখে, মুখে, চলনে, বলনে, হাস্যে-কটাক্ষে বিদ্যূৎ। সেতারে অমন গৌর-সারঙ্গের আলাপ গোকুল আর কখনও শোনে নাই। হাসির পরদায় পরদায় এমন গিটকিরি তাহার কল্পনাতীত ছিল। গোকুল কুল হারাইল। ইহার মাসখানেকের মধ্যে প্রায় সব ঠিক হইয়া গেল। উষাকে লইয়া উষার মা চলিয়া আসিলেন এবং গোকুলদের বাড়ির নিকট বাড়ি ভাড়া লইয়া গোকুলের পিতা-মাতার সহিত কথাবার্তা চালু করিয়া দিলেন। উষাকে দেখিয়া গোকুলের মা শুধু মুগ্ধ নয়- আত্মহারা হইয়া পড়িলেন, গোকুলের বাবা আত্মহারা হইলেন টাকার অঙ্ক দেখিয়া। ইহার সহিত বিবাহ ঘটাইতে পারিলে মায়ের নামে নাকি কলঙ্ক আছে- যাহার জন্যই নাকি তাহার মেয়ের বিবাহ হইতেছে না। তাহা অবগত হইয়াও নকুল নন্দী বিচলিত হইলেন না। শুধু যে সেটা উপেক্ষা করিলেন তাহা নয়, বাড়ির অপর কাহাকেও জানিতে পর্যন্ত দিলেন না। পাছে বিবাহটা ভাঙ্গিয়া যায়। যৌবনে অমন পদস্খলন দুই একবার সকলেরই হয়। উহা লইয়া মাথা ঘামাইবার প্রয়োজন নাই- ইহাই তাহার যুক্তি। উষা একটি শর্ত করিল এবং সে শর্তে গোকুল, গোকুলের মা, বাবা সকলেই রাজি হইলেন। বিবাহের পর তিলোত্তমাকে জন্মের মতো বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দিতে হইবে। 

আরও পড়ুনঃ গল্পঃ রোমান্স 


রাত্রি দ্বিপ্রহর, বিনিদ্র নয়নে গোকুল একা বিছানায় জাগিয়া আছে- কাল সকালেই উষার মা তাহাকে আশীর্বাদ করিবেন। কই তিলোত্তমা তো এখনো আসিল না। এত কান্ড হইয়া গেল তিলোত্তমা একটি কথাও বলে নাই। তাহাকে একবার জিজ্ঞাসা করা কর্তব্য। গোকুল এপাশ ওপাশ করিতে লাগিল। সমস্ত কাজ সারিয়া তিলোত্তমা অনেক রাত্রে শুইতে আসে, খুব ভোরে আবার উঠিয়া যায়। তাহার দেখা পাওয়া শক্ত। গত কুড়ি-পঁচিশ দিনের মধ্যে তাহার সহিত নির্জনে একবারও দেখা হয়নাই। এ সমন্ধে কোনো আলোচনাই হয় নাই। একবার জিজ্ঞাসা করা উচিত বইকি। গোকুল প্রতীক্ষা করিতে লাগিল। হঠাৎ গোকুলের ঘুম ভাঙিয়া গেল। দেখিল তিলোত্তমা সসঙ্কোচে উঠিয়া যাইতেছে। ভোর হইয়া গিয়াছে। শোন শোন। কি? আজ আশীর্বাদ মনে আছে তো? আছে। দেখ তোমার আপত্তি নেই তো? না। বিয়ের পরই তোমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছে। শুনেছ সে কথা? শুনেছি। তাই যাব। তুমি এক আধ-বার যদি দয়া করে যাও তাতেই আমার যথেষ্ট হবে। আমি যাই, আমার অনেক কাজ পরে আছে। চলিয়া গেল। গোকুল কিছুক্ষণ গুম হইয়া শুইয়া রহিল। তাহার পর উঠিয়া বসিল। তাহার পর বিছানা হইতে নামিয়া জানালার নিকট গিয়া দাঁড়াইল। দেখিল তিলোত্তমা ছাই-গাদায় বসিয়া বাসন মাজিতেছে। 
আশীর্বাদের সাজ-সরঞ্জাম লইয়া উষার মা আসিলেন। প্রচুর সাজ-সরঞ্জাম। প্রকান্ড একটি ফুলের মালাও সঙ্গে আনিয়াছিলেন। মুচকি হাসিয়া বলিলেন, উষা সারারাত ধরিয়া নিজের হাতে মালাটি গাঁথিয়াছে। গোকুল স্নান করিয়া আসিল। কার্পেটের আসন পাতা হইল। মালা পড়িয়া গোকুল আসনে বসিতে যাইবে এমন সময় গোকুলের মা বলিলেন, শাঁখটা বাজায় কে। আমার ঠোঁটের ঠিক মাঝখানে একটা ব্রণ হয়েছে আবার। ও বউমা, কোথা গেলে তুমি? শাঁখটা বাজাও। শাঁখটা হাতে লইয়া সসঙ্কোচে তিলোত্তমা দ্বারপ্রান্তে আসিয়া দাঁড়াইল। শাঁখটা বাজিয়া উঠিতেই গোকুলের পায়ের নখ হইতে মাথার চুল পর্যন্ত যেন বিদ্যুৎ শিহরণ বহিয়া গেল। আকস্মিক বর্জ্রাঘাতে সমস্ত চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া গেল যেন। আমাকে মাপ করবেন। দুই হাতে মালাটা ছিঁড়িয়া ফেলিয়া সে দ্রুতপদে তিলোত্তমার নিকট গিয়া তাহাকে জরাইয়া ধরিল।


                            (সমাপ্ত)

2 thoughts on “Heart Touching Short Love Story in Bengali | বাংলা লাভ স্টোরি”

Leave a Comment

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now