WhatsApp Channel
Follow Now
Telegram Group
Follow Now
Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am
আজকের Sad love story টির নাম – “ঝড়” গল্পের প্রধান চরিত্রে যোগিন সিং ও যশোধরা, বিষয় – ভালোবাসার স্মৃতি, Bangla love story এবং Valobashar golpo অথবা Jokes in bengali আরও পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।
Sad Love Stories in Bengali – বেদনার গল্প
আজকের গল্প – ঝড়
খুব বেশি দিনের কথা নয়।
একদিনের মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রচণ্ড ঝড়ে শহর কলকাতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। বড় বড় গাছগুলাে শিকড় উপড়ে পথের ওপর মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরদিন দেখে মনে হয়েছিল যুদ্ধ-হত এক-একটা অতিকায় দানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে অভিযােগ জানাচ্ছে। ভাঙা ডাল, ছেড়া তার আর উড়ন্ত টিনের চাল সরিয়ে চলাচলের পথ সুগম করতে এক সপ্তাহ লেগেছিল। কিন্তু আমি সেদিনের কথাই বলছি। সেই প্রলয়-সন্ধ্যার কথা। কাক চিল পটাপট মাটিতে আছাড় খেয়ে মরেছে। গাছ আর ভাঙা বাড়ি চাপা পড়ে অনেক লােক হতাহত হয়েছে। ট্রাম-বাস বন্ধ হওয়ায় বহু মেয়ে-পুরুষ পথে আটকে গেছে, আর ঘরে ফিরতে পারবে কিনা, সেই ত্রাস চোখ ঠেলে উঠেছে। যারা ভাগ্যবান আগেই ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল তারা ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়েছে।
কিন্তু সেই সন্ধ্যাটাকে আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখিনি। কিছু শুনেছি, কিছু অনুমান করেছি। বাড়িতে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে সকলে দুটো করে চোখ কপালে তুলে নিরীক্ষণ করেছে। আমি সেই লােক কিনা, আমার হাত-পাগুলাে সব যথাযথ আছে কি না। আশঙ্কা কাটতে মা-ই প্রথম মুখব্যাদান করেছে তুই এর মধ্যে এলি কি করে, বিপদ-আপদ হয়নি তো? এদিকে যে কাণ্ড, ঠাকুর রক্ষা করেছেন- দুই-এক কথায় সকলকে আশ্বস্ত করে কাণ্ড শােনার দিকে মন দিতে চেষ্টা করেছি। নিজেকে ভুলতে হলে, নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হলে, অন্যের কথা মন দিয়ে শােনার মত ওষুধ আর নেই। কিন্তু সেই পারা বড় শক্ত। আমারও সহজ হচ্ছিল না। ঝড় থেমে গেছে, তাই এরা ঝড়ের গল্প করতে পারছে। আর কত ফাড়া গেল তার রােমাঞ্চকর বিবরণ কানে আসছে। বিপদ হতে পারত বই কি, খুব বিপদ হতে পারত। কিন্তু আমার বুকের ঝড় এখনও থামেনি। দেহের সবগুলাে স্নায়ুতে টান ধরে আছে। ওদের কথা শুনতে শুনতে সেগুলিকেই শিথিল করার চেষ্টা। সহজ হওয়ার চেষ্টা।
আমি তখন আকাশে ছিলাম। একটা মালবাহী প্লেনে। যার পাইলট ক্যাপ্টেন সিং। যােগীন সিং। আর একটু বিস্তৃত করে বলা দরকার। কলকাতা থেকে কুচবিহার ট্রেনে প্রায় দু’দিনের পথ, প্লেনে দেড় ঘণ্টার। খবরের কাগজের কাজে প্রায়, তখন এদিকে আসতে হত। এই সূত্রে যােগীন সিংয়ের সঙ্গে আলাপ। মাসে চারবারও প্লেনে যাতায়াত করেছি। তাছাড়া দুই-একবার আসাম বা বাগডােগরা থেকে ফেরার সময়ও যােগীন সিংয়ের প্লেন পেয়ে গেছি। ছােট একটা বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রধান পাইলট যােগীন সিং। গােড়ার জীবনে তিন বছর মিলিটারিতে ছিল। এই সুবাদে ক্যাপ্টেন। মিলিটারির ওপরওয়ালাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতে পার্মানেন্ট কমিশন পায়নি বা নেয়নি। প্রথম শর্তের মেয়াদ ফুরােতেই ছেড়ে এসেছে। বনিবনা না হওয়ারই কথা। তবে মেজাজের ওপর মেজাজ দেখানাের লােক থাকলে যােগীন সিংয়ের সেখানে টিকে থাকার কথা নয়। তার মত পাইলট নিয়মিত সার্ভিসের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও অনায়াসে মােটা মাইনের কাজ জোটাতে পারত। মাসে।
দু-দশবার ইংল্যান্ড আমেরিকা করতে পারত।
কিন্তু সে কাজ করতে হলে নিয়মের বশ হতে হয়, মেজাজও কিছুটা খাটো করতে হয়। যােগীন সিংয়ের সঙ্গে চেনা-যাত্রী হিসেবে আমার আলাপ বটে, কিন্তু হৃদ্যতার আরও একটু কারণ ছিল। বছর তিন-চার আগে খবরের কাগজে একটা ফ্রী-ফাইটের ছবি ছাপা হয়েছিল, সেটা আজ আর কারও মনে নেই বােধহয়। কলকাতার বাইরের এক অভিজাত হােটেলে বয়সের গরমে আর টাকার গরমে তিনটি ধনী সন্তান নিজেদের ভাষায় এক বিদেশী তরুণী মহিলার উদ্দেশে তরল টিকা-টিপ্পনী কাটছিল। মহিলা ভাষা না বুঝলেও তাকে নিয়েই কিছু হচ্ছে বুঝে কুদ্ধ এবং আরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। যােগীন সিং মদ খাচ্ছিল আর ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিল। উঠে গিয়ে প্রতিবাদ করতে ধনীর দুলালেরা তিনজনেই একসঙ্গে রুখে উঠল এবং মাতাল বলে কটুক্তি করে উঠল। একে তিনজন তারা, তায় স্বাস্থ্যও কারও খারাপ নয়!
যােগীন সিং আর কিছু না বলে নিজের টেবিলে এসে মদের গেলাস খালি করল, তারপর উঠে গিয়ে চুপচাপ বাইরে চলে এল। একটু বাদে চায়ের পাট শেষ করে আমি বাইরে এসে দেখি, যােগীন সিং নির্লিপ্ত মুখে হােটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে। চোখাচোখি হতে নিস্পৃহ উক্তি করল হ্যালাে। আমিও বললাম, হ্যালাে। আলাপ তখনও এর বেশি নয়। এরােড্রাম থেকে বেরিয়ে অনেক সময় এক হােটেলে এসে উঠলেও, লােকটাকে অত মদ খেতে দেখে, আমি তেমন বেশি কাছে ঘেঁষি না। কিন্তু সেদিন আমার সাংবাদিক চোখে কি যেন একটা সম্ভাবনার অস্বস্তি দেখা দিল। ট্যাক্সি ধরার অছিলায় আমি দাঁড়ালাম।
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ হরপার্বতী সংবাদ
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ভিতরের মহিলাটি
আগেই চলে গিয়েছিলেন। লােক তিনটিও একটু পরেই বেরুল। তারপর ফুটপাথের ওপরেই খণ্ড যুদ্ধ। দুজনের নাক, মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুতে লাগল তারা ফুটপাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তৃতীয় জন প্রাণ বাঁচিয়ে মােটরে উঠে চম্পট দিয়েছে। আমি কিছুই করিনি। শুধু দাঁড়িয়ে দেখেছি, আর ঠিক যে মুহূর্তের ছবি তােলা দরকার, সেই মুহূর্তের একটা ছবি তুলেছি। তারপর ঘটনার বিবরণ লিখে কাগজে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই থেকেই হৃদ্যতা। পরে যােগীন সিং হাসতে হাসতে বলেছে, তার উপকার করেছি আমি। সে অনেক জায়গা থেকে অনেক সাবাস পেয়েছে বলে নয়।লােকগুলাের টাকার জোর আছে, তারা কেস করত, অন্যভাবেও জব্দ করার চেষ্টা করত। কিন্তু খবরের কাগজে এভাবে ফলাও করে সব প্রকাশ হয়ে পড়াতে নিজেরাই গা ঢাকা দিয়ে আছে। খবরের কাগজ তার জোরাল সাক্ষীর কাজ করেছে। আমি প্রীত হয়েছিলাম। কিন্তু এও জানি, যােগীন সিং কারও উপকারের পরােয়া না রেখেই যা করার করেছিল।
এরপর বাইরের এরােড্রাম থেকে বেরিয়ে সে যখন হােটেলে উঠেছে, আমাকেও সেখানে টেনে নিয়ে গেছে। আমি বসে বসে তাকে অনেক মদ খেতে দেখেছি, কিন্তু মাতাল হতে দেখিনি। তাকে দেখলে বা কথাবার্তা বললে পাঞ্জাবি বলবে না কেউ। দাড়ি-গোঁফের বালাই নেই, আমাদের মতই পরিষ্কার বাংলা বলে। ছেলেবেলা থেকে বাংলাদেশেই মানুষ। যাক, বর্তমানের কথা বলি। কুচবিহার থেকে আমার ফেরার তাড়া ছিল। কিন্তু দুদিনের আগে প্লেনে সিট পাব, সে আশা ছিল না। ইতিমধ্যে যােগীন সিংয়ের প্লেন দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। সে আবার পরদিনই বিকেলে প্লেন নিয়ে ফিরছে জেনে, তাকে ধরলাম, নিয়ে যেতে হবে। যােগীন সিংও তক্ষুনি রাজি। তার এক টেলিফোনে ফেরার ব্যবস্থা হয়ে গেল। কারও আপত্তির প্রশ্ন ওঠে না, যােগীন সিং বলেছে যখন, মালের ওপর বসিয়ে নিয়ে গেলেও নিয়ে যাবেই জানি। পরদিন দুপুর থেকে আকাশের অবস্থা ঘােরালাে।
কাগজেও ঝড়ের আভাস দিয়েছে। শাঁ শাঁ করে বাতাস বইছে, থমথমে মেঘের গুরু গুরু ডাকটা অন্যরকম। যােগীন সিংকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই ওয়েদার, যাবে কি করে? সে নির্ভাবনায় জবাব দিল, যেতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কলকাতায় ? মাথা নাড়লে। হাসলও একটু। এ ধরনের হাসি আমি চিনি। বললাম তাহলে তো বেশ জটিল অ্যাপয়েন্টমেন্ট মনে হচ্ছে, সময়ে না গেলে, নিশ্চয় কোনাে লেডির বিরাগভাজন হবার ভয় আছে? যােগীন সিং আরও হেসে আরও বেশি মাথা ঝাকাল। আমার শােনার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সদাব্যস্ত যােগীন সিংয়ের প্রণয় কথা ফেঁদে বসার মেজাজ ছিল না। টুকটাক দু-চার কথা মাত্র জানা গেল। মহিলার নাম যশােধরা। ক্রিশ্চিয়ান। মস্ত ব্যবসায়ীর মেয়ে ছিল, কিন্তু তাদের বড় অবস্থার সময় যােগীন সিং ও মেয়ের পাত্তা পায়নি। বাপের ব্যবসা লাটে উঠতে খানিকটা সুবিধে হয়েছে। তখনও যােগীন সিংয়ের টান দেখে না, টান আরও বাড়তে দেখে, যশােধরা বুঝেছে যােগীন সিংয়ের লােভ তার বাবার টাকার ওপর নয়, লােভ তারই ওপর।
সে অনেক ব্যাপার যােগীন সিং হাসিমুখে স্বীকার করেছে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফেল করলে রক্ষা নেই। সেটা সত্যি কথাই। মেয়ের যেমন মেজাজ তেমনি অভিমান, একবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফেল করার ফলে সে কি কাণ্ড! যােগীন সিং অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। কাণ্ড বিস্তারে আগ্রহ দেখা গেল না। একটু বাদেই গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে ব্যস্ত পায়ে কোথায় চলে গেল। কিছু হয়ত মনে পড়ে থাকবে। যথাসময়ে এয়ার অফিসে এসে হতাশ হলাম। এই আবহাওয়ায় প্লেন ছাড়বে মনে হয় না। ঝােড়াে বাতাস ক্রমে বাড়ছে, আকাশের অবস্থা ভয়াবহ। এ সময় কুচবিহার থেকে ওই একটাই প্লেন ছাড়ার কথা। ছােট বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মালবাহী প্লেন। ছাড়বে কি ছাড়বে না এ নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। তবু ক্যাপ্টেন যােগীন সিং আসতে অফিস থেকে তাকে জানান হল সব, জায়গারই ওয়েদার রিপাের্ট খারাপ—টেক অফ করা ঠিক হবে না। যােগীন সিং কান দিলে না, নিঃশঙ্ক জবাব দিল- ও কিছু না, উপর দিয়ে চলে যাব। আমার ভয় ধরল একটু।
এক ফাঁকে তাকে ধরে জিজ্ঞেস করলাম- এর মধ্যেই তুমি যাবে?
তুমি থেকে যাও না, কাল যেও। নিজের কাজে চলে গেল। দ্বিধা কাটিয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে তুলতে চেষ্টা করলাম। প্লেন যাবে, যােগীন সিং যাবে, এত মালপত্র যাবে, সঙ্গে যাত্রীও যাবে আরও-এর মধ্যে নিজের প্রাণটার জন্যে এত ভাবতে লজ্জা করল। তাছাড়া সত্যিই বিপদের সম্ভাবনা থাকলে যােগীন সিংই বা রওনা হতে চাইবে কেন। প্লেন উঠল। আমরা চারজন মাত্র যাত্রী। এ ছাড়া পাইলট, কো-পাইলট এবং দু-চারজন ক্রু। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের, অর্থাৎ যাত্রীদের অবস্থা সঙ্গিন। মালবাহী প্লেনে বসার আসনের অবস্থা প্যাসেঞ্জার প্লেনের মত নয়। মালের সঙ্গে খানিকটা মালে মত হয়েই আসা। তবে কোমরে বাঁধার বেল্ট গােছের কিছু আছে। সামনেই মুহুর্মুহু লাল আলাে জ্বলছে, ফ্যাসন ইওর বেল্ট-বেল্ট বেঁধে বসুন। কিন্তু ওই বেল্ট বাঁধা সত্ত্বেও স্থির হয়ে বসে থাকা অসম্ভব। বাইরে ঝড় কতটা টের পাচ্ছি না। কিন্তু ঝাকানি দোলানিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঘরি দেখলাম। সময় অনুযায়ী আমরা কলকাতার ওপর এসে পড়েছি। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই ভয় আর ত্রাসে শরীরের রক্ত হিম হয়ে এল।
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ প্রেমের বিচিত্র গতি
অনেক উঁচু দিয়ে প্লেনটা চক্রাকারে ঘুরছে। নিচে নামার এক একটা চেষ্টার মুখে লণ্ডভণ্ড কাণ্ড- আমরা কে কোথায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছি ঠিক নেই। মনে হচ্ছে ঝড়ের মুখে কুটোর মত এখুনি সব নিঃশেষ হয়ে যাবে। চোখের সামনে মৃত্যু দেখছি আমরা। মৃত্যুর প্রতীক্ষা করছি। এরই মধ্যে ঝড়ের তাণ্ডব এড়িয়ে কোনােমতে প্লেন সম্ভবত অনেক উঁচুতে উঠে স্থির হল একটু। ভিতরে সকলে চিৎকার করে বলাবলি করতে লাগল, প্লেন আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হােক, যেখান থেকে এসেছি সেইখানে, অথবা যে-কোনাে দুর দূরান্তে যেখানে ঝড় নেই।
আমিও একমত, কিন্তু জানাব কাকে?
জানাবার সুযােগ হল। কি কারণে মিনিট দুইয়ের জন্য কো-পাইলটের হাতে প্লেন ছেড়ে একবার ভিতরে এল ক্যাপ্টেন সিং। মনে হল, ভগবান আমাদের আরজি শােনাবা জন্যেই তাকে ভিতরে পাঠালেন। বিপদ সম্বন্ধে আমরা বুঝি কি, সে বেশি বােঝে সেই জ্ঞানও তখন আমাদের নেই। শুধু বাঁচার আকুতি। অন্য যাত্রীরা তাকে দেখেই চেঁচামেচি করে উঠল। তারা আশ্বাস চায়, বাঁচার আশ্বাস। প্লেন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলল তারা। কিন্তু অনুভূতি শূন্য পালিশ-করা মূর্তি যােগীন সিংয়ের। কারও কথার জবাব দিলে না। ভিতরে একটা ছােট্ট খুপরির মধ্যে গিয়ে ঢুকল, আর দু’মিনিট বাদেই বেরিয়ে এল।
এইবার তাকে দেখা মাত্র আমার ত্রাস আরও বেড়ে গেল। কারণ আমার মনে হল, ওখানে গিয়ে সে গলায় খানিকটা মদ ঢেলে এল। সত্যি মিথ্যে জানি না। কিন্তু আমার তাই মনে হল, বিশ্বাস হল। রাগে ক্ষোভে আর ভয়ে দেহ অবশ। মনে হল, এক বদ্ধ পাগলের পাল্লায় পড়েছি আমরা। এই দুর্যোগ থেকে আর অব্যাহতি নেই, প্রাণের আশা নেই। যােগীন সিং ভিতরে চলে গেল। কোথা দিয়ে কোথায় উড়ছি জানি না, তবে প্লেনের দাপাদাপি অপেক্ষাকৃত কম। ভাবতে চেষ্টা করলাম, হয়ত আমার অনুমান মিথ্যে, যােগীন সিং হয়ত কোনাে কাজেই ওই খুপরির মধ্যে ঢুকেছিল। ডিউটির সময় মদ খাবেই বা কোন সাহসে। আশা করতে ভালাে লাগল, আমরা হয়ত নিরাপদ স্থানেই ফিরে চলেছি। তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। কোন দিকে চলেছি কিছু ঠাওর করা যাচ্ছে না। অকস্মাৎ মিনিট কয়েকের জন্যে সাক্ষাৎ মৃত্যুর বিবরের মধ্যেই যেন ঢুকে পড়লাম আমরা। দেহের সব রক্ত প্রবল বেগে শিরশির করে উঠতে লাগল, বুঝলাম শাঁ-শাঁ করে নিচের দিকে নামছে প্লেন। ঝড়ের সামান্য একটু বিরতির অপেক্ষায় ছিল যােগীন সিং। তারপরেই সব বােঝাবুঝির বাইরে আমরা। দশ মিনিট গেছে, কি দশ ঘণ্টা গেছে, কি অনন্দকাল গেছে- কিছুই জানি না। একসময় সচেতন হয়ে দেখলাম প্লেন থেমে আছে, আর আমরা বেঁচে আছি। সেটাই এমনই বিস্ময় যে চট করে বিশ্বাস হয় না।
দরজা খােলা হতে বাইরের দিকে চেয়ে আরও বিস্ময়। এরােড্রামেই নেমেছি। ঝােড়াে হাওয়ায় তখনও দুপায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানাে শক্ত। এই বিপদ দেখেই একটা গাড়ি এসে আমাদের প্লেনের চত্বর থেকে তুলে নিয়ে অফিসে এনে ছেড়ে দিল। সর্বাঙ্গ অবসন্ন। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে জীবনের আলােয় ফিরে আসার শান্তি। অঘােরে ঘুমিয়ে পড়ার মত শান্তি। কিন্তু যাব কী করে? এ প্যাসেঞ্জার প্লেন নয় যে কোম্পানির গাড়ি করে তাদের এয়ার অফিস পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। এদিকে প্লেন চলাচল সব বন্ধ, অন্য কোনাে কোম্পানির গাড়িও যাতায়াত করছে না। বাসও নেই। নির্জীবের মত এরােড্রামের রেস্তোরাঁয় ঢুকে এক কাপ কড়া কফি নিয়ে বসলাম। প্রাণে যখন বেঁচেছি, সমস্ত রাত এখানে কেটে গেলেও খুব আপত্তি নেই।
হ্যালাে।
যােগীন সিং। মুখ লাল, কিন্তু ঠোটের কোণে হাসির আভাসও একটু। যে লােকের খপ্পরে পড়ে প্রাণ যেতে বসেছিল, তাকে দেখেই আবার অন্য আশা জাগল। যােগীন সিংয়ের ছােট্ট গাড়ি আছে একটা। সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলাম, তােমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট
সাউথে, না এদিকেই?
সাউথে। কেন?
আমাকে যতটা সম্ভব এগিয়ে দাও না, যাব কি করে?
ঘড়ি দেখল। তারপর পিঠ চাপড়ে বলল—কাম অন- একটি কেবিনের দিকে এগােল সে। কফির পেয়ালা তুলে নিয়ে আমিও তার সঙ্গে কেবিনে গিয়ে ঢুকলাম। যােগীন সিং দুজনের খাবারের অর্ডার দিল। খাবার না আসা পর্যন্ত চুপচাপ বসে রইল। কিছু ভাবছে মনে হল। খাবার আসতে পরদা টেনে দিয়ে কিট থেকে মদের বােতল বার করল। আমি অবাক। প্রেয়সী সন্নিধানে যাবার আগেও এ বস্তু গলাধঃকরণ করতে পারে ভাবিনি। খেতে খেতে ঈষৎ ব্যঙ্গস্বরে বলল, দুর্যোগে ওখানকার নিষেধ সত্ত্বেও প্লেন ছেড়েছি বলে আমার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়া হবে শুনছি। ইডিয়েট! ঈষৎ রক্তিম দেখাল মুখ। যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিলাম তা আর স্মরণ করতে ইচ্ছে করে না। তবু বললাম- এভাবে প্লেন না ছেড়ে আর একটু দেখে নিলেও তো পারতে। দেখতে গেলে আর প্লেন নিয়ে ওঠাই যেত না, সে আমি আকাশের অবস্থা দেখেই বুঝেছিলাম। সে জন্যে পাঁচ মিনিট আগেই প্লেন-স্টার্ট দিয়েছিলাম। অর্থাৎ সব জেনেশুনে সে প্লেন ছেড়েছে। এ রকম লােককে কিই বা বলি। যােগীন সিং নিবিষ্ট মনে আহার করছে। আর মদ খাচ্ছে। যেভাবে খাচ্ছে, মনে হল ধীরে সুস্থে গােটা বােতলটাই শেষ করবে।
বললাম- এসে যখন এই বিপদ দেখলে তখনই বা প্লেন ফেরালে না কেন? সাংঘাতিক কাণ্ড হতে পারত- বিরক্তির সুরে পাল্টা প্রশ্ন করল, ফিরব বলে প্লেন ছেড়েছিলাম? তােমাকে তো বলেছি আজ না এলেই নয়। অর্থাৎ তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। এক রমণী তার জন্যে অপেক্ষা করছে, বা করবে। এদিকে নিশ্চিন্ত মনে সে পানাহারে মগ্ন। আমি হতভম্ব। এই দুর্যোগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না রাখতে পারলে এক পাগল ভিন্ন আর কেউ রাগ করে না। বিশেষ করে যে লােককে আকাশ-পথে উড়ে আসতে হবে। কিছু শােনার জন্যেই টিপ্পনীর সুরে বলতে ছাড়লাম না, এইদিনে না যেতে পারলেও কি তিনি বুঝতেন না? মাথা নাড়ল। বুঝত না। বলল, বড় অবুঝ মেয়ে, বােঝাবুঝির মধ্যে নেই। একবার এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফেল করে যে দুর্ভোগ হয়েছে, সে যদি জানতে পড়বি তো পড়, আজ আবার সেই দিন, সেই তারিখ।
ভিতরে ভিতরে উৎসুক হয়ে উঠেছি। কুচবিহারেও একবার বলেছিল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট না রাখতে পারলে রক্ষা নেই,মেয়ের যেমন মেজাজ তেমনি অভিমান একবার সময়মত যেতে না পারার ফলে কি কাণ্ডই না হয়েছিল। প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে সেই আসাই এল বটে। কিন্তু এসে এখানে বসে মদ গিলছে। সত্যি কথা বলতে কি, যে মেয়ে যােগীন সিংয়ের মত বেপরােয়া লােককে এভাবে নাকে দড়ি বেঁধে টেনে আনতে পারে, তাকে একটিবার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। জিজ্ঞাসা করলাম, তা এসেওঁ তুমি এখানে দেরি করছ কেন? সংক্ষিপ্ত জবাব দিল, সাড়ে আটটায় যাবার কথা। এমনভাবে বলল, যেন ওই সময়ের দু-দশ মিনিট আগেও যাওয়ার কোনাে প্রশ্নই ওঠে না। এমনও হতে পারে, নির্দিষ্ট স্থানে কোনাে সময় ওদের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। হয়ত ঠিক সময়ে রমণীটি অভিসারে আসবেন। ঘড়ি দেখলাম। সাতটা বাজতে তখনও পাঁচ মিনিট বাকি। জিজ্ঞাসা করলাম কথা না রাখতে পেরে একবার খুব মুশকিলে পড়েছিলে বুঝি ? খুব।
আজকের এই দিনেই- মদ খাচ্ছে বলেই হয়ত ওর চোখের পাতা ভারি ঠেকছিল। আর মদ খাচ্ছিল বলেই হয়ত সেই মুশকিলের কথা সহজে জানা গেছে। কিন্তু মােটামুটি শােনার পরেও মুশকিলটা এমন প্রাণ তুচ্ছ করে ছুটে আসার মত মনে হয়নি আমার। যােগীন সিংয়ের মত যশােধরার ব্যবসায়ী বাবা লােকটা আদৌ সুবিধের নয়। মেয়েকে টোপ করে মস্ত পয়সাঅলা জামাই গাঁথবার মতলব ছিল তার। ওই করে শেয়ারবাজারের ঘা সারাবে ভেবেছিল। কিন্তু মেয়ের জন্যেই তা হচ্ছিল না। মেয়ে ওদিকে বাপের কাছে একজন মস্ত মানুষ বানিয়ে রেখেছে যােগীন সিংকে। মস্ত টাকার মানুষ নয়- মানুষের মত মানুষ। তার এক গো তাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। নিরুপায় হয়ে বাপ তখন সামনাসামনি যােগীন সিংয়ের সঙ্গে একবার কথাবার্তা কয়ে বুঝে শুনে নিজে রাজি হয়েছিল।
সেও অনেকদিন অনেক চেষ্টার পর মেয়ে-বাপকে
এই সাক্ষাৎকারে রাজি করাতে পেরেছিল। দিনক্ষণ ঠিক হল। কিন্তু এমন কাণ্ড, বলতে গেলে একরকম অকারণেই যােগীন সিং আসতে দেরি করল। এমন কিছু দেরি নয়, মিনিট বার-চোদ্দ।ঘোড়েল বাপ ঘড়ি ধরে ঠিক দশটি মিনিট অপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল। যােগীন সিং গিয়ে দেখে যশােধরাও নেই। ব্যাপারটা শুনল তার মায়ের কাছে। বাপ বেরিয়ে যাওয়ার পর রাগে জ্বলতে জ্বলতে মেয়েও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। সম্ভব অসম্ভব অনেক জায়গায় যােগীন সিং খুঁজে বেড়াল তাকে। তার বাপটাকে মনে মনে ধরে আছড়াল বারকতক। ঘণ্টাখানেক বাদে নিজের বাড়িতে এল দেখতে, যশােধরা সেখানে অপেক্ষা করছে কি না। এসে শুনল, টেলিফোনে খবর এসেছে। যশােধরা হাসপাতালে আছে। রাগে আর অভিমানে মেয়ে এমন গাড়ি চালিয়েছে যে সরাসরি অ্যাকসিডেন্ট।
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ কুয়াশায়
হাসপাতালেও এই মেয়ে সহজে মুখ ফিরিয়ে তাকায়নি তার দিকে। যােগীন সিং অনেক ক্ষমা চেয়ে, অনেক নাক-কান মলে জীবনে আর কোনােদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফেল করবে না প্রতিজ্ঞা করে তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিল। মনে মনে বললাম, যেভাবে এসেছ পারলে আজও একবার নাক-কান মলে তােমাকে আবার কিছু প্রতিজ্ঞা করতে হবে। জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলাম, অত মদ যে খাচ্ছে তাই বা ওর প্রেয়সী বরদাস্ত করবে কি করে। কিন্তু তার আগেই ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে সচকিত হলাম, সাতটা পঁয়ত্রিশ। এখন না উঠলে সে সাড়ে আটটায় পৌঁছবে কি করে? ঘড়ির দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটুও তাড়া দেখা গেল না। অস্ফুটে জবাব দিল, সময় আছে। অন্যমনস্কর মত আবার কিছু ভাবছে মনে হল। আরও ঠিক দশ মিনিট কাটল এইভাবে, আমি উসখুস করছি, অবাকও হচ্ছি। মদের নেশায় সময়ের গণ্ডগােল হয়ে গেল?
পৌনে আটটা।
এস।
বােতলে আরও খানিকটা আছে, সেইখানেই পড়ে থাকল। বড় বড় পা ফেলে গাড়িতে এসে উঠল। পাশে আমি। পিছনে দেখলাম একগােছা ফুল রয়েছে। এই দিনে ফুল কোথা থেকে সংগ্রহ হল ভেবে পেলাম না। গাড়ি ছুটেছে।
হেডলাইটে রাস্তার অবস্থা দেখে আমার দুই চক্ষু স্থির। ঝােড়াে বাতাস আর নেই। বৃষ্টি পড়ছে। ভাঙা ডাল আর গাছের পাতায় সমস্ত রাস্তা ঢেকে গেছে। কোথাও মস্ত মস্ত টিনের চালা পড়ে আছে তার ওপর দিয়েই মড় মড় শব্দে গাড়ি পার হতে টের পাচ্ছি বস্তুটা কি। এ-রকম রাস্তায় পয়তাল্লিশ মিনিটে দমদম এরােড্রাম থেকে দক্ষিণ কলকাতায় পৌঁছনাের সংকল্প শুনলেও লােকে পাগল বলবে। কিন্তু গাড়ির স্পিড দেখে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তি বাড়ছে। এক সময় স্বাভাবিকভাবেই বলতে চেষ্টা করলাম, যে রাস্তা, তােমার সাড়ে আটটায় পৌঁছনাের প্রশ্নই ওঠে না জবাব দিল না। কিন্তু গাড়িতে স্পীড আরও বেড়ে গেল। রাজ্যের ভয় আমাকে গ্রাস করতে এল।
এবারে মনে হল, আমি যথাযথই এক পাগলের পাল্লায় পড়েছি। একবার প্রাণে বেঁচেছি, এবারে আর রক্ষা নেই। প্রায় এক বােতল মদ গিলে গাড়ি চালাচ্ছে। কি করছে একটুও হুঁশ নেই নিশ্চয়। ক্ষোভে দুঃখে নিজেরই হাত কামড়াতে ইচ্ছে করল। একবার ওভাবে বেঁচে, আর চোখের সামনে অত মদ খেতে দেখেও কেন আমি যেচে সঙ্গে এলাম! মৃত্যু না ঘনালে এমন মতি হবে কেন আমার? বাধা পেয়ে গাড়ি এক-একবার বিষম লাফিয়ে উঠছে। সামনে মস্ত মস্ত এক-একটা ডাল, বা হয়ত একটা আস্ত গাছই পড়ে আছে। স্পীড না কমিয়ে খেলনার মতই অপরিসর ফাক দিয়ে গাড়িটা পার করে আনছে যােগীন সিং। শ্যামবাজার পেরিয়ে সার্কুলার রােড ধরে নক্ষত্রবেগে গাড়ি ছুটছে। রাস্তায় জনমানব নেই, পুলিশ নেই, অন্তত আমি কিছুই দেখছি না। আমি শুধু দেখছি, সামনে মৃত্যু। মৃত্যু হাঁ করে আছে।
ডাক ছেড়ে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করছে আমার। দুহাতে তাকে জাপটে ধরে থামাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার দিকে চেয়ে কিছুই করতে পারছি না। পাথরের মূর্তির মত বসে গাড়ি চালাচ্ছে সে। ওকে বাধা দেওয়ার থেকেও যেন মৃত্যুর গহ্বরে গিয়ে ঢােকা সহজ। আমি তারই প্রতীক্ষা করছি। চকিতে একবার মনে হল লােকটা বােধহয় আত্মঘাতী হতে চায়। এই জন্যেই অমন দুর্যোগে অনায়াসে প্লেন ছাড়তে পেরেছে, আর এই জন্যেই এই গাড়ি নিয়ে এমন পাগলা ছােটা ছুটছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অ্যাকসিডেন্ট হল না। গাড়ির গতি কমল। রাস্তার পাশে হঠাৎ এক জায়গায় ঘ্যাচ করে থেমে গেল। ঘড়িতে সাড়ে আটটা। আমারও হুঁশ ফিরল যেন। এদিক-ওদিক চেয়ে দেখি পার্কস্ট্রিটের এক জায়গায় এসেছি।
তারপর হঠাৎ এক ধাক্কা খেয়ে বিমুঢ় আমি। ফুলের গােছা নিয়ে যােগীন সিং এখানে কোথায় নামছে। আমার শরীরের রক্ত এবারে দ্বিগুণ গতিতে শিরশির করে পা বেয়ে নেমে যাচ্ছে। এপাশে সাদা দেয়াল-ঘেরা বিস্তৃত সমাধি-ভূমি। দুর্যোগের অন্ধকারেও এখানকার সমাহিত সাদাটে পরিবেশ চোখে পড়ে। নিজের অগােচরেই মুখ দিয়ে কথা বেরুল, এখানে কোথায় যাচ্ছ? ফুল হাতে যােগীন সিং থমকে দাঁড়াল একটু। শান্ত গভীর দৃষ্টি মেলে আমার দিকে তাকাল। হঠাৎ আমার মনে হল, দুই চোখে কত জল জমাট বেঁধে আছে ঠিক নেই। ঝরছে না, শুধু চকচক করছে- বিড়বিড় করে বলল এখানেই তো, হাসপাতাল থেকে সােজা নিয়ে এসেছিলাম তাকে, এখানে আছে। বস, বেশি দেরী হবে না- শ্রান্ত পা দুটো টেনে টেনে সমাধিস্থানের দিকে এগিয়ে গেল সে। আমি নির্বাক, নিস্পন্দ।
@ 👉 Sad Stories in Bengali গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না…..
অনেক সুন্দর হয়েছে।