WhatsApp Channel
Follow Now
Telegram Group
Follow Now
Last updated on July 4th, 2023 at 12:50 am
আজকের Bengali Short Stories অর্থাৎ বাংলা ছোট গল্পটির নাম “ভালোবাসা একটি আর্ট” গল্পের প্রধান চরিত্রে রিজু ও সুবর্ণা, গল্পের বিষয়-ভালোবাসা নিয়ে খেলা! আরও Romantic Premer Golpo এবং Funny Jokes in Bengali পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়িয়া যদি আপনার ভালো লাগিয়া থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করিতে ভুলিবেন না।
Bengali Short Love Story – ছোট একটি ভালোবাসার গল্প
আজকের গল্প – ভালোবাসা একটি আর্ট
মেয়ে একটি শহরের, যদিও একই পাড়ার নয়। তেমনি আবার শরীরটিও ছােট, পাড়ায় পড়ায় বিশেষ দূরত্ব নেই। কাজেই দেখাশােনা, মেলামেশা হয়েছিল বেশ খানিকটা শৈশবে, কৈশােরে। অবশ্য দুটি পরিবারের মধ্যে পূর্বে থেকেই খানিকটা ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেই, পাড়া ডিঙিয়ে দু-বাড়ির মধ্যে যাতায়াত ছিল। তারপর যেমন হয়, আবহমান কাল থেকে যেমন হয়ে আসছে “তােমার সুধাকে আমায় দিতে হবে দিদি, আমার রিজুর জন্যে বলছি।
ও মেয়ে আর আমি অন্যত্র যেতে দেবনা।
“সে তাে ওর ভাগ্যি, ভাই। অত ভাগ্যির কথা ভাবতে পারা যায় না বলেই, নৈলে দুটিতে ঐরকম যখন খেলা করে জামরুল তলাটিতে, দৃষ্টি গিয়ে পড়ে, আর ফেরাতে ইচ্ছে করে নাকো চোখ। তবে বলব যে, বলবার ভরসা পাব তবে তাে….
এইভাবেই একদিন শুরু হয়ে, এইভাবেই চলে কথা। এদিকে এঁদের গল্পের আসর, আরও পাঁচজনকে নিয়ে, ওদিকে ওদের খেলাঘর, পাড়ার আরও পাঁচটি জোটে কর্তা-গিন্নী- -ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেলাঘর, কিংবা পঠশালা, কিংবা চণ্ডীমণ্ডপের দুর্গাপূজার মিটিং ; যেদিন যেমন মনের হাওয়া বয়। গল্পের আসরেও নানারকম শাখাপ্রশাখা বেরােয় গল্পের, তবে যতই না কেন বেরুক, শেষ সেই দু-তিনটি কথায় “কী সুন্দর!
চমৎকার মানায় দুটিতে!”
আরও পড়ুনঃ ঝিঙে ফুল বাংলা কবিতা
সবারই যে অন্তরের কথা এমন বলা যায় না ; তবে বসু-গিন্নীর মনটি বড় ভালাে, পান-জর্দা ও বড় মিষ্টি, সবাই এ-দুটির খাতির রাখবার চেষ্টা করে একটু আর দুটো মুখের কথা বের করে দিতে লাগেই বা কার কি?
খুব যে আহামরি মানানসই এমন নয়ও তােতাই কথাগুলাে আরও লাগে বালােই।
আগে সবার কথাই ধরা যাক। ওর পুরাে নাম সুবর্ণা। সুবর্ণা যে সুন্দরী, একথা আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি।
প্রথমে রঙের কথাই ধরা যায়। ওর বাপ-মা পর্যন্ত না মেনে পারেন না যে ওখানে ওঁদের নামের আন্দাজে ভুল হয়ে গেছে। তারপর নাক, মুখ, চোখ কোন বিশেষত্ব নেই, নাকটি বরং মাঝখানে একটু চাপাই।
হয়তাে কিছু থাকলেও এক একটা মুখে যেমন একটু
মিষ্টতা লেগে থাকে, সেটুকু আছে ; হয়তাে তেমন চোখে দেখলে সেটা আরও একটু স্পষ্টও হয়ে ওঠে, কিন্তু সেতাে এমন কিছু নয়।
অপরপক্ষে রিজু রীতিমতাে সুন্দর ; যৌবনে এসে সে এখন সুপুরুষ। বঙ্কিম যে বলেছেন, ছেলেবেলার ভালােবাসায় একটা অভিশাপ আছে, সেটা খুবই
সত্য বরং আরও ব্যাপকভাবে সত্য, শুধু প্রতাপ-শৈবলিনীর অর্থেই নয়।
যে সময় চোখে নূতন রং লাগে, খাদা-কালাের প্রভেদ বুঝতে দেয় না, শৈশব- কিশােরের সেই মাহেন্দ্ৰ লগ্নে রিজুও ভালােবেসে ছিল সুবর্ণাকে।
দু-বাড়ির আলােচনায়, খানিকটা করে রসনা দিয়েও তাে যাচ্ছিল। বেশ ভালাে লাগত ওকে দেখতে, ওর কথা ভাবতে। তারপর স্কুল যুগের খানিকটা পর্যন্ত এগিয়ে অভিশাপটা আস্তে আস্তে এসে পড়তে লাগল।
এরপর রিজু যখন ভালাে করে বুঝল সে একজন তেইশ বৎসরের সুন্দর যুবক, কলকাতায় কোন এক কলেজের ওপরতলার ছাত্র তখন তার ভালােবাসার অভিশাপ সম্পূর্ণ।
ছেলেবেলার ভালােবাসারই কথা বলছি। এমনি বয়সের যে ভালােবাসা তা একের জায়গায় পাঁচ দাঁড়িয়েছে। অবশ্য কলকাতা জায়গা বলেই, মফঃস্বলের এক ছােট শহরে তে ব্যাপক বিস্তৃত ভালােবাসার সুযােগ বা অবসরই বা কোথায়? ও ভালােবাসে ওর কলেজের ছাত্রী সরমা হালদারকে। দুজনে একই ইয়ারে পড়ে, যদিও একই শ্রেণীতে
নয়। রিজু হল গণিতের ছাত্র, সরমা ইতিহাসের।
কিন্তু ইতিহাস-গণিতের দূরত্বে অন্যদিক দিয়ে যতই দূরতিক্রম্য হােক, ভালােবাসার পক্ষে তাে কিছুই নয়, খুব ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেছে ওর সঙ্গে।
সরমার বাবা ভারত সরকারের দপ্তরে কাজ করেন। বড় কাজ, তবে বদলি হয়ে বেড়াতে হয়। পুণাতে ছিলেন, বছর খানেক হল কলকাতায় বদলি হয়ে পার্কসার্কাসের দিকে সাহেব পাড়ায় বাড়ি নিয়ে রয়েছেন। নিজের গাড়ি আছে, সরমা তাতেই কলেজে
যাওয়া আসা করে। কোন কোন দিন সরমাদের গাড়ি করেই রিজু যায় ওদের বাড়ি, নয় তাে ট্রামে-বাসেই! পরিবারটি দিল্লী-বােম্বাই-লক্ষ্ণৌ-পুনা ঘুরে একটু সাহেবী ভাবাপন্ন। এদিকে মাঝারি গােছের পরিবার, সরমার বাবা, মা, দুই ভাই, তিনটি বােন। সরমার দাদা লক্ষ্ণৌ হাসপাতালের ডাক্তার, কিছুদিন হল বিলাত থেকে বড় খেতাব নিয়ে আসতে গেছে।
স্মার্ট ছেলে, কলেজেও ভালাে, চেহারাটাও রয়েছে, রিজু বেশ ভালাে করেই মিশে গেছে পরিবারটির সঙ্গে।
এমন অবস্থায় এসব পরিবার যেমন হয়ে থাকে, সরমার সঙ্গে ওর সম্বন্ধের সূত্রটুকু স্বীকৃত হয়ে গেছে। রিজুর বাড়ির অবস্থাও মন্দ নয়। মফঃস্বল শহরের পরিবার বলে যে ত্রুটিটুকু রয়েছে, ছেলেকে একবার বিদেশে ঘুরিয়ে আনলে সেটুকু যাবে চলে। এটা
ওঁদের ভবিষ্যৎ প্ল্যানের মধ্যে এসেও গেছে।
সবই ঠিক, বেশ এগিয়ে চলেছে রিজুর, তবু মাঝে মাঝে পা যাচ্ছে রুখে ।
এটা শুরু হয়েছে যেদিন সরমার দাদা বিলাত যাওয়ার আগে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে লক্ষ্মেী থেকে কলকাতায় নিয়ে এল, তার পর থেকেই। রিজুর মনে হল সে এতদিন থেকে যা খুঁজছিল যেন এইবার পেল।
আরও পড়ুনঃ 30 Best Bengali Sweets
প্রকৃত ভালােবাসার, প্রথম দৃষ্টিতেই ভালােবেসে ফেলার, না বেসে উপায় না থাকার যা লক্ষণ আর কি?
অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটি। সরমার চেয়ে বয়সেও কম। তারপর সরমার রূপের যেমন একটা তীব্রতা আছে, মৃণালের তা একেবারে নেই। নরম, একটু লাজুক, এক নজরেই ভালােবেসে ফেলার ঝেকে যে পদ্যটা লিখে ফেলল রিজু (সরমাকে নিয়েও লিখেছিল), তাতে মৃণালকে গলা পর্যন্ত সমস্ত পদ্মের উঁটা মৃণাল এবং তার ওপরের বাকিটুকু ফুটন্ত শতদল বলে কমপ্লিমেন্ট দিল। অবশ্য কবিতাটা হাতে দিলে না, নিজের মনের ভাবটা গুপ্তই রাখল, কিন্তু কয়েকদিন ধরে নিতান্ত সঙ্গীন হয়ে গেল।
তবে মৃণাল এসেছিল ওর জীবনে যেন ক্ষণ-বসন্ত রূপে। গােণা ঠিক সতেরােটি দিন ছিল বােনের বাড়িতে যেদিন চলে গেল, বিকেলের গাড়িতে যায়, সে হিসাবে পুরাে সতেরােও নয়—তারই মধ্যে বর্ণে-গন্ধে-সঙ্গীতে ওর মনে একটা বিলম্ব বাধিয়ে পরে দিন কতকের জন্য মনটাকে একেবারে বর্ণ-গন্ধ-সঙ্গীতহীন মরুভূমি করে দিয়ে চলে গেল। আবার মনটা এসে সরমার আগেকার মতাে বসাতে কিছু দেরি হল। তবে একবার যখন বসল, একটানা ভাবেই চলল কৃষ্টসম্পন্ন অভিজাত পরিবার, আত্মীয় স্বজনের যাওয়া আসা আছে, নূতন নূতন রূপের ঢেউয়ের ধাক্কা লাগছে, সরমার ওপর ভালােবাসাটা টলেও যাচ্ছে একটু-আধটু করে, তবে স্থায়ী কোন ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। এই করে বছরখানেক কেটে গেল।
একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, সরমা ইতিমধ্যে করছে কি? উত্তরটা এক কথাতেই দেওয়া যায়। ভালােবেসেই যাচ্ছে সরমা তার নিজের পদ্ধতিতে। কথাটা হচ্ছে, ভালােবাসার আবার প্রকারভেদ আছে। এক ভালােবাসা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েই সন্তুষ্ট ;সরমার
তাই। রিজু এদিকে ক্রমাগত নিত্য নূতনের মধ্যে দিয়ে ভালােবাসাটাকে রীতিমতাে একটি আর্টের পর্যায়ে তুলে ধরেছে। যে-ভালােবাসা আর্টের স্তরে উঠে গেছে তার একটি শক্তি হচ্ছে, সে একই সময়ে আত্মপ্রকাশ আর আত্মগােপন দুটোতেই সমর্থ।
রিজু এ-শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠায়, এই যে এতগুলি মুখ এল-গেল ওর মনে, এর বার্তা গােপন রইল সরমার কাছে। সে দেখল ভালােবাসার প্রদীপটি নির্বাত-নিষ্কম্পই রয়েছে রিজুর বুকে ; নিশ্চিন্তই রইল! আর্ট হল জয়ী।
এই সময় ওর জীবনে একটা দিক্ পরিবর্তনের অবসর এল। ওরা দুজনেই পাশ করে কলেজ থেকে বেরিয়ে এল এবং সরমার পিতা ওদের বিবাহের প্রস্তাবটা তুললেন ; তার সঙ্গে রিজুকে বিদেশে পাঠাবারও। রিজু প্রায় রাজিও ছিল ; আর্টের পেছনে পড়ে
থাকার একটা ক্লান্তিও তাে আছে। একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যেত, কিন্তু এই সময় লিসা
এসে উপস্থিত হল।
আরও পড়ুনঃ গল্পঃ অশোক ফুলের মধু
লিসার সঙ্গে পরিচয় হল সরমাদের বাড়িতেই। বাঙালীর মেয়েই ওর নাম শীলা।
সেইটেই উল্টে লিসা হয়ে গেছে। শােনা যায় নাকি একটা কারণও আছে, ওর ঠোটের হাসি নাকি মােনালিসার হাসি। সরমাদের সঙ্গে লিসাদের পরিচয় এখানেই এবং এই কদিনের মাত্র। ওর পিতা বিরাট ডাক্তার, কলকাতার লােক, এইদিকেই ফিরিঙ্গী পাড়াতে একটা বাসাবাড়িতে থেকে প্রাকটিস্ করছিলেন, তারপর একটা বাড়ি কিনে সরমাদের
প্রতিবেশী হয়েছেন।
মােনালিসার রহস্য শুধু তার ঠোটের হাসিটুকুতে। লিসা কিন্তু সর্বাংশেই রহস্যময়ী।
বাহ্যত ও যাকে ইংরাজীতে বলা যায় ‘গ্ল্যামারস’ তাই। রূপেভঙ্গিতেও যেন চারিদিকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে চলে নিজেকে। কিন্তু তারপাশেই এমন আত্ম-সংহত, এমন নির্লিপ্ত যে মনে হয়, ওর দেহ-মনের মাঝখানটিতে একটা খুব শক্তিশালী চুম্বক আছে এবং তা লিসার সমস্ত সত্তাটিকে নিজের চারিধারে আকৃষ্ট করে রেখেছে।
চুম্বক যখন, আকৃষ্ট করেছে রিজুকেও, তবে মৃণাল ঘটিত ব্যাপারটুকু হয়ে যাওয়ার পর থেকে দ্বিজেনের ভালােবাসা অনেকটা রইল। এক্ষেত্রেও আবার যদি সরমাতেই ফিরে আসতে হয় তাে সে বড় বিশ্রী হবে।
একবার দিল ধূলা সরমার চোখে। বার বার
না-ও পারতে পারে।
তবু দুর্বার লিসার আকর্ষণ, বড় নিরুপায় করছে রিজুর সামনে। শেষে অনেক ভেবে-চিন্তে, দুদিকের ভালােবাসার সঙ্গে আপাতত একটা রফা করে মাঝামাঝি একটা পথ আবিষ্কার করে ফেলল রিজু। সরমার কাছে সময় চাইল, জানাল রিসার্চের
কাজটা নূতন পেয়েছে, এর মধ্যে বিয়ের ব্যাপারটা এনে ফেললে একটু আঘাত হয়ে যেতে পারে ; একনিষ্ঠ মনােযোগ তাে দরকার প্রথম। কিন্তু এই উভয়নিষ্ঠ ভালােবাসা নিয়ে একনিষ্ঠ গবেষণার অজুহাতটা টিকল না।
অবশ্য সরমার কাছে নয়, সে বেচারি আর্ট-দক্ষ ভালােবাসিয়ে নয়, সুতরাং চোখ-কান বুজে শুধু ভালােবেসেই যাচ্ছে। তবে তার বাবার তাে আর রিজুকে ভালােবেসে ফেলা নয়, দৃষ্টি বেশ স্বচ্ছই আছে, সন্দিগ্ধই হয়ে পড়েছেন! হয়তাে একথাও ঠিক যে পুরুষ মানুষই তাে, এক সময় নিজেও ভালােবাসাটাকে আট হিসেবেই চর্চা করেছিলেন,
চেনেন তার স্বরূপ ধরে ফেলেছেন! রাজি হলেন না সময় দিতে। তাড়াতাড়ি ভালােবাসা-নেই এমন একটি পাত্রের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দিয়ে দিলেন।
সরমার বাড়ি বন্ধ হয়ে গেল রিজুর কাছে। সরমা গেল তাে লিসাও গেল।
হয়তাে এক বাড়ির সংশয় অন্য বাড়িতেও সংক্রামিত হয়ে গিয়ে থাকবে।
সরমা যাক, লিসা যাক, মৃণাল যাক, কিন্তু আর্ট তাে যেতে পারে না ; যার সাধনায় লােক সারা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েও ক্ষান্ত হতে পারছে না, মনে করেছে পরজীবন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে তার সাধনা। রিজুও লেগে রইল। কিন্তু হিসাবে ভুল হয়ে গেল।
সব সাধনাই জীবনভাের চলে, জীবনের ওদিকে যদি থাকেই কিছু তাে সেখানেও টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু এ-সাধনায় যে তা চলে না, সে কথাটা বুঝল না নিজে।
সরমা-মৃণাল লিসারা বুঝতে দেয়নি। ও-পর্ব শেষ হলে রিজু একদিন হঠাৎ উপলব্ধি করল প্রায় চারটে বছর টেনে নিয়েছে ওরা, সে এখন সাতাশ-আটাশ বছরের যদি যুবকই বলতে হয়তাে, যৌবনের প্রান্ত সীমায়।
এবার কাহিনী ধারাকে সংক্ষিপ্ত করা যায়, যদিও সময়ের দীর্ঘতায় প্রায় দশ বৎসরের কাহিনী।
তবে একরকম বৈচিত্রহীনই ঐ বছর চার ধরে যা হল তারই পুনরাবৃত্তি বলতে পারা যায়। এবার যা সাধনা সেটাকে যদি অভ্যাস-যােগও বলা যায় তাে নিতান্ত ভুল হয় না।
রিসার্চ শেষ করে ভালাে আফিসে ঢুকেছে রিজু এবং ধাপে ধাপে করে সে এখন একটা ডিপার্টমেন্টের হর্তাকর্তা। তার অধীনে এখন একজন মেয়ে টাইপিস্টও রয়েছে রীতা সেন।
এই দশটা বৎসরের প্রতিটি দিন ভালােবাসার একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, শুধু মনস্থির করে উঠতে পারেনি রিজু। সেই সরমাদের পরে মৃণালরা আছে, মৃণালদের পরে লিসারা। যখন মনে হয় এর ভালাে-বাসায় আকণ্ঠ ডুবে আছি, দেখা যায় একেবারে
তলিয়ে যাওয়ার মতােও পাত্রী আছে।
কতদূর চলতাে বলা যায় না, একদিন হঠাৎ দেখল উল্টোদিক থেকেও ঠিক এই ব্যাপারটা চলতে পারে। ওর শেষ পরীক্ষা চলছিল রীতা সেনকে নিয়ে একদিন সে এল না। এল তার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার চিঠি।
শুনল রীতা অন্য ডিপার্টমেন্টের যুবক টাইপিস্ট হিল্লোল গুপ্তর সঙ্গে বিবাহ করতে যাচ্ছে।
চেম্বারটা বন্ধ করে দিয়ে দ্বিজেন অফিসের গােল আয়নাটার সামনে দাঁড়াল, লক্ষ্য করল সাধনায় আত্মবিস্তৃত হয়ে যা চোখে পড়েনি এতদিন। কানের কাছে চুলগুলােয় অল্প অল্প পাক ধরেছে, কপালে গালে অল্প অল্প বলিরেখা। সাধনার অবসাদ আছে তাে এদিকেও তাে বয়স প্রায় চল্লিশ।
সুবর্ণার কাছে ফিরে গেল রিজু।
দুটো পাশ দিয়ে সুবর্ণা এখন ওদের ছােট মফঃস্বল শহরেই মাষ্টারি করছে। গরীবের মেয়ে, বিবাহ হয়নি। কিংবা করেই নি বিবাহ।
রিজু যে ভালােবাসা নিয়েই এসেছে একথা শপথ করে বলা যায় না। কোথায় সরমা-মৃণাল-লিসা-রীতা, কোথায় সুবর্ণা ! ভালােবাসা নয়, নিতান্ত প্রয়ােজন একটা!
তবু দক্ষ আর্টিষ্টই তাে, বলল “তােমার জন্য এই প্রতীক্ষা করে বসে আছি এতদিন সুধা।” সুবর্ণাও ঐ কথাটাই বলতে পারত, কিন্তু সে তাে আর্টচর্চা করবার অবসর পায়নি, জীবনে, অল্প একটু হেসে মুখটা ঘুরিয়ে শুধু একটু নীচু করে দিল।
@ 👉 Bengali Short Stories গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না…..